চট্টগ্রামে ঝিমিয়ে পড়েছে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান। বিগত সময়ের তুলনায় মাদক উদ্ধারের মামলা নেমেছে অর্ধেকে। ১ আগস্ট থেকে অঘোষিতভাবে বন্ধ ছিল মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম নগরে প্রবেশের চারটি তল্লাশিচৌকিও। এ সুযোগে মাদক, অস্ত্রসহ অপরাধীরা অবাধে ঢুকে পড়ছে বলে ভাষ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
এ দিকে দেড় মাস পর ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও তল্লাশিচৌকিগুলো চালু হয়েছে। পাহারায় আছেন পুলিশের সদস্যরা। মাদকবিরোধী অভিযানও জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন সদ্য যোগদান করা পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের ১৬ থানায় করোনার আগে প্রতি মাসে গড়ে তিন শতাধিক মাদক মামলা হয়েছে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত অভিযান তেমন ছিল না। নগর পুলিশ ব্যস্ত ছিল করোনা মোকাবিলায় নানা কাজে। জুলাই মাস থেকে মাদকবিরোধী অভিযান আগের মতো শুরু হয়। তল্লাশি শুরু হয় চারটি চৌকিতে। জুলাইয়ে নগরের ১৬ থানায় মাদকের মামলা হয় ৩২০টি। আর ১ আগস্ট থেকে ঝিমিয়ে পড়ে মাদকবিরোধী অভিযান। বন্ধ হয় তল্লাশিচৌকিগুলো। আগস্টে মাদকের মামলা হয় ১৬০টি। চলতি মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মামলা হয় মাত্র ১০টি। ডবলমুরিং ও আকবর শাহসহ কয়েকটি থানায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত একটিও মামলাও হয়নি।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, টেকনাফে গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনার পর তাঁরা অনেকটা ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছেন। কিছুটা নীরব ভূমিকা পালন করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ইশারায়’।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তল্লাশিচৌকিগুলো চালু হয়েছে। সতর্কতার সঙ্গে পেশাদারত্ব নিয়ে অভিযান চালানোর জন্য পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছে।’
চট্টগ্রামে নগরে প্রবেশের চারটি পথের মধ্যে একটি অক্সিজেন মোড়। এটির পাশে ওয়াপদা গেটে পুলিশের তল্লাশিচৌকি রয়েছে। গত ১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি বন্ধ ছিল। একই অবস্থা নগরের সিটি গেট এলাকার তল্লাশিচৌকি, মইজ্জারটেক ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার। এগুলো এত দিন বন্ধ থাকায় অবাধে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গাড়িসহ বিভিন্ন লোকজন ঢুকে পড়েছে। তবে এখন চালু হওয়ায় সেই সুযোগ পাবে না বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত নগর পুলিশের কয়েকজন সদস্য জানান, আগাম তথ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট গাড়ি কিংবা ব্যক্তিকে তল্লাশি চালিয়ে তাঁরা মাদক কিংবা অস্ত্র উদ্ধার করতেন। আবার সন্দেহজনকভাবেও উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে একজন সহকারী উপপরিদর্শকসহ আটজন পুলিশ সদস্য একটি তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে পুলিশের অভিযানে ভাটা পড়লেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মাসের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত তাঁরা ৩৬টি মামলা করেছেন। ৩৫ হাজার ইয়াবা ও ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই একই সময়ে ১৩টি মাদক মামলা ও ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন বলে জানান র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাছান। মাদকবিষয়ক গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইমদাদুল হক মনে করেন, ধরপাকড় কমে গেলে মাদকের সরবরাহ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, হাত গুটিয়ে বসে না থেকে সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করলেই জনগণ পুলিশকে বাহবা দেবে।