অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার
ডেসটিনির দুই মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি
রফিকুল আমীনসহ আসামি ৫৩ জন। কারাগারে তিনজন।
এখন জামিনে তিনজন। বাকিরা পলাতক।
অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা ৯ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে একটি মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অপর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলা দুটি এখন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৪–এ বিচারাধীন।
এই দুই মামলার বাইরে রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেওয়ায় আরেকটি মামলা রয়েছে। এ মামলায় গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন তিনি।
প্রায় ৯ বছর আগে মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পৃথক মামলা হয়
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয় রাজধানীর কলাবাগান থানায়। দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে একটি (ট্রি প্ল্যান্টেশন) মামলায় রফিকুলসহ ১৯ জন এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম দুটি মামলাতেই রয়েছে। দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, এমডি রফিকুল আমীন ও পরিচালক কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম। জামিনে আছেন তিনজন। বাকিরা পলাতক।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই টাকার মধ্যে এলসি (ঋণপত্র) হিসেবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং সরাসরি পাচার করেছে আরও ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
মামলা দায়েরের চার বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট রফিকুল আমীনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি দুদক।
জানা গেছে, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় এখন পর্যন্ত ২০২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদারের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলায় আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনাজনিত ছুটির ফলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেক দিন থেকে ব্যাহত হচ্ছে। করোনা না থাকলে এত দিনে এ মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়ে যেত। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে দুদকের পক্ষে নতুন কোনো সাক্ষী আর হাজির করা হবে না।
অন্যদিকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাছ বিক্রির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় এ পর্যন্ত সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, করোনার কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম ততটা এগোয়নি।
কারাবন্দী রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি জুম অ্যাপস ব্যবহার করে (অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে থাকা অবস্থায়) ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর গত শনিবার তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে চার কারারক্ষীকে বরখাস্ত এবং ১৩ জন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
দুই মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, একটি মামলার বিচার কার্যক্রম একেবারে শেষ পর্যায়ে। তাঁরা আশা করছেন, আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।