জেকেজির এক ল্যাপটপেই করোনার তিন শতাধিক সনদ, সত্যতা যাচাই করছে পুলিশ
জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) গুলশানের কার্যালয় থেকে জব্দ করা একটি ল্যাপটপ থেকেই তিন শতাধিক করোনা শনাক্তের সনদ পেয়েছে পুলিশ। এগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সনদে যে পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে যোগাযোগ করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। নমুনা সংগ্রহের পর এই সনদগুলো পরীক্ষা ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তাঁরা।
পরীক্ষা ছাড়াই করোনা শনাক্তের ফল দেওয়ার অভিযোগে গত মঙ্গলবার জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া জেকেজির সাবেক কর্মী হুমায়ুন কবীর ও তাঁর স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন পরদিন। বাকি চারজন আরিফুল হক চৌধুরী, জেকেজির প্রধান উপদেষ্টা সাঈদ চৌধুরী, আইটি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস ও অফিস সহকারী আলামিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। আজ শুক্রবার ছিল রিমান্ডের শেষ দিন। আগামীকাল শনিবার তাঁদের আদালতে হাজির করবে পুলিশ।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজিকে শুধু বুথের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নমুনা শনাক্ত করে সরকার অনুমোদিত পরীক্ষাগারে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল। সেই পরীক্ষাগার থেকেই করোনা শনাক্তের সনদ সেবাগ্রহীতাদের পাঠানোর কথা। এখানে সনদ দেওয়ার সঙ্গে জেকেজির কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও তাদের একটি ল্যাপটপে তিন শতাধিক সনদ পাওয়া গেছে। এগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এর আগে হুমায়ুন কবিরের ল্যাপটপে পাওয়া ৩৭টি করোনা পরীক্ষার সনদ ভুয়া বলে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা।
তেজগাঁও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কল্যাণপুরের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক কামাল হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হুমায়ুন কবীর ও তাঁর স্ত্রীকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। হুমায়ুন কবীর ছিলেন জেকেজির গ্রাফিক ডিজাইনার। আর তানজীনা রাজধানীর পান্থপথের ন্যাশনাল নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। সেখান থেকে জেকেজির চিফ নার্সিং অ্যাডভাইজার পদে যোগ দেন। তাঁরা দুজনই গত ১২ এপ্রিল জেকেজি থেকে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, বাড়ি গিয়ে নমুন সংগ্রহের জন্য জেকেজি বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। সেবাগ্রহীতাদের যোগাযোগের জন্য পাঁচ-ছয়টি হটলাইন নম্বর চালু করেছিল তারা। করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিরা এই নম্বরেই বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য জেকেজির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। নমুনা সংগ্রহ বাবদ সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ১০০ ডলার বা ৮ হাজার ৬০০ টাকা নেওয়া হতো।
ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন ও তানজীনা দাবি করেছেন জেকেজির সিইও আরিফুল হক তাঁদের এই কাজে বাধ্য করেছেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর হুমায়ুনকে জেকেজিতে আটকে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কাজ করতে রাজি হলে তাকে ছাড়া হয়।
ওসি বলেন, নমুনা সংগ্রহের সময় তাঁরা রোগীর উপসর্গ লিখে আনতেন। এরপর সংগৃহীত নমুনা রাস্তায় ফেলে দিতেন। পরে রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী প্রতিবেদন তৈরি করে তা পাঠিয়ে দিতেন।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, হুমায়ুন গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ায় রিপোর্ট তৈরির কাজ তিনিই করতেন। তিনি নিজেও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে একটি বলয় তৈরি করে ফেলেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত নম্বরে তাঁরা যোগাযোগ করতেন। তাঁদের যেদিন গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিনও পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন এই দম্পতি।
মাহমুদ বলেন, অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী। পুরো বিষয়টি তিনিই তদারক করতেন।