সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন হত্যার ঘটনায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।
এর আগে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ উপকমিশনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আজ মঙ্গলবার আবদুল্লাহ আল মামুনকে তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। তবে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সহকর্মীরা জানান, গতকাল সোমবার রাতে সাদা পোশাকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আজ সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাসা থেকে রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে আদারব থানা–পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। আনিসুল করিম হত্যায় চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা আদালতকে বলেছেন, আনিসুল করিমকে যখন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়, তখন আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁকে ভর্তি না করে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের ম্যানেজারকে ফোনে বলেন, ‘রোগী পাঠালাম’। সেখানে আনিসুল করিমকে নেওয়া হয়। আনিসুল করিম ওয়াশরুমে যেতে চাইলে ১০ থেকে ১২ জন মিলে তাঁকে মারধর করে হত্যা করেন।
পুলিশের এই কর্মকতা বলেন, আবদুল্লাহ আল মামুন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক হলেও আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতাল, মাইন্ড রয়েল, টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করতেন। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ধনাঢ্য রোগী এলে তিনি চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালে পাঠাতেন। সেখান থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে প্রাথমিকভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন অন্য হাসপাকতালে প্রাকটিস করেন। তিনি বলেন, অন্য চিকিৎকসকেরা করেন, তাই তিনিও করেছেন। দালালের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা অন্য হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন। গত দু–তিন দিনে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তাঁরা কারাগারে আছেন।
আনিসুল করিমকে হত্যায় যাঁরা প্রলুব্ধ করেছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, শেরেবাংলা নগরের হাসপাতালগুলো থেকে যেসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী পাঠানো হয়, চিহ্নিত করে সেগুলোতেও অভিযান চালানো হবে।
এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার ১২ জন। একজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন আর দুজন পলাতক। পলাতক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মানসিক সমস্যায় ভুগে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আনিসুল করিম। ভর্তির পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির পরপর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তাকে ভর্তির পরই একটি কক্ষে নিয়ে হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারধর করছেন।
আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।