ছেলের বিরুদ্ধে একে একে ২৬ মামলা, দিশেহারা পরিবার
একের পর এক মামলা থেকে ছেলেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক বাবা। চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত হারবার মাস্টার মোয়াজ্জেম হোসেন খান আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তাঁর ছেলে মুনির হোসেন খান বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক। আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা শেষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৮ সালে তাঁর ছেলে পদত্যাগ করেন। পরে অন্য ব্যবসা শুরু করলে ছেলে মুনিরের বিরুদ্ধে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ৫টিসহ ঢাকার গুলশান থানা ও আদালতে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬টি মামলা হয়েছে। তাঁর দাবি, সব কটি মামলার এজাহার অভিন্ন। শুধু সময় ও অর্থের পরিমাণ ভিন্ন। মুনিরের বাবা, ছোট ভাই ও স্ত্রীর নামেও মামলা করা হয়েছে। মুনির এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন।
মামলাগুলোর অভিযোগে বলা হয়েছে, কেওয়াই স্টিলের টাকায় পরিবার–পরিজন নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন মুনির। কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা বিল ও পেমেন্ট ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দীর্ঘদিন তাঁর ছেলে কেডিএস গ্রুপে চাকরি করেছেন। প্রতিবছর গ্রুপটি অডিট করে থাকে। টাকা আত্মসাৎ করে থাকলে সেই সময় কেন তাঁর ছেলেকে ধরা হয়নি। তিনি আরও বলেন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার আরেকটি কারণ থাকতে পারে। সেটি হলো ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক কেডিএস গ্রুপের মালিকের ছেলে ইয়াছিন রহমানের সঙ্গে সভা করতে যান তাঁর ছেলে। ওই সভা চলাকালে মুনিরকে মারধরও করা হয়। মারধরের কথা জানিয়ে ঘটনার পরের মাসে কেডিএস গ্রুপের মালিকের বড় ছেলে সেলিম রহমানের কাছে ই–মেইল করে মুনির। কিন্তু অপর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামে জিবরান তায়েবি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকায় ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ইয়াসিনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন হাইকোর্ট। এখনো ইয়াসিন কারাগারেই আছেন।
মামলা দিয়ে হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেডিএস গ্রুপের আইন উপদেষ্টা আইনজীবী আহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুনির হোসেন খান কেডিএস গ্রুপ থেকে পণ্য আমদানিসহ নানাভাবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই সময় মনির কোনো অডিট করতে দিতেন না।
কর্মকর্তারা কেউ প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানি করতেন। সব কটি মামলার ধরন একই, হয়রানি করতে কি পৃথকভাবে মামলা করা হচ্ছে, জবাবে আহসানুল হক বলেন, ব্যাংকসহ নানা জায়গায় অর্থ আত্মসাতের কাগজপত্র যখনই পাওয়া যাচ্ছে, তখনই মামলা করা হচ্ছে। উপাদান না থাকলে মামলা হতো না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগারে কেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইয়াসিন রহমান। সব মিথ্যা, সব সাজানো।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কীভাবে কারাগারের অভ্যন্তরে সভা করেন এবং অন্যকে মারধর করতে পারেন, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই সময় তিনি কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন না।
ওই সময় জেল সুপার ছিলেন বর্তমানে ময়মনসিংহ কারাগারে কর্মরত ইকবাল কবীর। জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আসামির সাক্ষাতের সুযোগ আছে। কাউকে মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
আজকের সংবাদ সম্মেলেনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুনিরের ছোট ভাই মেহেদি হাসান খান, তাঁদের আত্মীয় ক্যাপ্টেন মো. জাফর ও কায়সার চৌধুরী।