চাল নিয়ে অনিয়ম, বক্তব্য নিতে গিয়ে সাংবাদিক হামলার শিকার
নরসিংদীর রায়পুরার আমিরগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন একজন সাংবাদিক। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের নেতৃত্বে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ওই সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রায়পুরার আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সজল ভূঁইয়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এসএ টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি। ঘটনার পরপর স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাল চুরি এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন করতে বৃহস্পতিবার আমিরগঞ্জে যান বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ান টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বাতেন বিপ্লব। তাঁর পূর্বপরিচিত হওয়ায় ওই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা করতে আসেন সজল ভূঁইয়া।
সজল ভূঁইয়ার অভিযোগ, চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ চাল না দেওয়া এবং আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় লোকজন। এসব তথ্যের অনুসন্ধান করতে বাতেন বিপ্লবের সঙ্গে তিনিও গিয়েছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে তাঁকে দেখেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন ইউপি চেয়ারম্যান। কারণ, এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতিবেদন করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন চেয়ারম্যান।
বাতেন বিপ্লব বলেন, প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য নিতে ইউপি চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর সজল ভূঁইয়াকে দেখে চেয়ারম্যান উত্তেজিত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। এরপরই হামলার ঘটনা ঘটে। জ্ঞান হারানো সহকর্মীর জন্য অনুনয়-বিনয় করলে তাঁকেও হুমকি দেন চেয়ারম্যান। হামলায় অংশ নেওয়া উত্তেজিত ব্যক্তিদের ঠেকাতে গেলে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য ক্যামেরা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের নির্দেশে ১০-১২ জন কর্মী-সমর্থক মিলে তাঁকে মাইক্রোবাস থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে এনে মারধর করতে থাকেন। এ সময় লাঠি, বইঠা ও রড দিয়ে তাঁর নাকে-মুখে-বুকে-পিঠে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। আহত ওই সাংবাদিককে হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর কর্মীরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ আমীরুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাংবাদিক সজল ভূঁইয়াকে হাসপাতালে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর নাকে-মুখে-বুকে-পিঠে মারধর করায় রক্তাক্ত জখম তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার সময় তাঁরা আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। ওই সাংবাদিকই প্রথম তাঁদের ওপর হামলা করে। পরে তাঁরা প্রতিহত করেন। তাঁদেরও কয়েকজন লোক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে কাকে, কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির শুক্রবার দুপুরে বলেন, এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বাড়িঘরে বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানসহ জড়িতরা সবাই পলাতক থাকায় আটক করা যায়নি।
হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মাখন দাস বলেন, এই বিষয়ে শনিবার সকালে প্রেসক্লাবে সাংবাদিককে নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।