সরকারের জমি বেহাত
চাঁদপুরে খাসজমিতে ‘টিপুনগর’
জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপুর কবজায় সরকারের খাসজমি
■ রেজিস্ট্রি অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ করে শতাংশপ্রতি ৪৬৫ টাকা দরে জমির দলিল।
■ দুই বছর আগে জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
■ জাওয়াদুর চাঁদপুর জেলা আ. লীগের সহসভাপতি। ২০১৭ সালে তিনি এই পদ পান।
বিপুল পরিমাণ খাসজমি নিজের কবজায় নিয়ে তৈরি করেছেন মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান। কেবল সরকারি জমির ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেননি, ওই এলাকার নাম বদলে রেখেছেন নিজের নামে।
এই ব্যক্তির নাম জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপু। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বড় ভাই তিনি।
শিক্ষামন্ত্রীর সংসদীয় আসন চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর)। জাওয়াদুর রহিম সরকারি যে জায়গা কবজায় নিয়ে ঘের-খামার করেছেন, সেটি হাইমচর উপজেলার ৪ নম্বর নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এই খাসজমি প্রতি শতাংশ দলিল করা হয়েছে মাত্র ৪৬৫ টাকা দরে। মোট ৪৮ দশমিক ৫২ একর (৪ হাজার ৮৫২ শতাংশ) জমি জাওয়াদুর ও তাঁর সহযোগীদের নামে দলিল করে নেওয়া হয়েছে।
হাইমচর ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাহেরচরের যে জায়গা মন্ত্রীর ভাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন, তা খাসজমি। ওই চরে কোনো ব্যক্তিকে জমির মালিকানা দেওয়া হয়নি। বেআইনিভাবে এসব জমি দলিল করা হয়েছে। জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে উপজেলা ভূমি অফিস। ভূমি অফিসের প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক এসব জমি উদ্ধারে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েছেন।
এভাবে জমি দলিল করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ১১ মার্চ জাওয়াদুর রহিম বলেন, হাইমচরের সাবরেজিস্ট্রি অফিস তাঁকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। তিনি খাজনা দিচ্ছেন।
বাহেরচর একটি প্রত্যন্ত চর এলাকা। এখানকার মৌজার নাম সোনাপুর তাজপুর। হাইমচর সদর থেকে বাহেরচরে চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। বছর পাঁচেক আগে এলাকায় চাউর হয়, ওই চরে অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে সরকার। স্থানীয় লোকজন জানালেন, ওই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই বাহেরচরে প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জমি নিজের কবজায় নিতে শুরু করেন জাওয়াদুর। পরে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ করে নামমাত্র মূল্যে দলিল করে নেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে চরের চেহারা বদলে যাবে। তাই আগেই সেখানে গিয়ে জুড়ে বসেছেন মন্ত্রীর ভাই, যাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে লাভবান হতে পারেন।
জাওয়াদুর রহিম ২০১৭ সালে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পান। এর আগে আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না তিনি।
সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণে জাল–জালিয়াতির অভিযোগের সঙ্গে জাওয়াদুর রহিমের নাম আলোচনায় আসে। চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে যে স্থানে নতুন ক্যাম্পাস তৈরির জায়গা ঠিক করা হয়েছে, জাওয়াদুর সেখানেও ৬ দশমিক ৯ একর জমি (৬০৯ শতাংশ) কিনে রেখেছিলেন। সমালোচনার মুখে ওই জমি তিনি আমমোক্তারনামার মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর ইউপির ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছে হস্তান্তর করেন। সশরীর গিয়ে অধিগ্রহণের টাকা নেওয়া এড়াতেই তিনি এই কৌশল বেছে নেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।
৪৬৫ টাকা শতাংশে দলিল
স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্র বলছে, গত শতকের সত্তরের দশকে বাহেরচরে চাষাবাদ শুরু হয়। পরে চরটি মেঘনা নদীগর্ভে ডুবে গিয়ে নব্বইয়ের দশকে আবার জেগে ওঠে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চরটিতে জরিপ (দিয়ারা) হয়নি। উল্লেখ্য, নদীতে নতুন চর জাগলে যে জরিপ হয়, তাকে দিয়ারা জরিপ বলে। দিয়ারা জরিপের মাধ্যমেই জমির মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে জমি বিক্রি করা যায় না। যেহেতু জরিপ হয়নি, তাই বাহেরচরে কোনো মৌজা মূল্য ঠিক হয়নি।
এই উপজেলায় ১৫টি মৌজায় সরকার জমির দাম ঠিক করেছে। এর মধ্যে নাল জমির সর্বোচ্চ মৌজা দর প্রতি শতাংশ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা। আর সর্বনিম্ন দর ১১ হাজার ২০০ টাকা। অথচ মন্ত্রীর ভাই জাওয়াদুর ও তাঁর সহযোগীরা সেখানে প্রতি শতাংশ মাত্র ৪৬৫ টাকা দরে জমি দলিল করে নিয়েছেন।
বর্তমানে এই চরে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা কিসের ভিত্তিতে জমির ভোগদখল করছেন, তা উপজেলা ভূমি অফিসের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নদীপয়স্তি (চর জেগে ওঠা) হওয়ার পর সেখানে অনেকেই জমি দখল করে চাষবাস শুরু করেন। পরে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে দখলকৃত লোকজনের নামে জমাবন্দী (বন্দোবস্ত নয় বা খতিয়ান নয়) করে দেওয়া হয়। জমাবন্দী দেওয়া মানে জমির মালিকানা নয়। এই জমি কেউ বিক্রি করতে পারবে না। স্থানীয় লোকজন ভোগদখল করলেও এটি খাসজমি হিসেবে থাকবে, যার মালিকানায় থাকবে সরকার।
উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র বলছে, দীপু মনির ভাই জাওয়াদুর রহিম, ৪ নম্বর নীলকমল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও শিক্ষামন্ত্রীর রাজনৈতিক পিএস মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের নামে পাঁচটি দলিলের (চারটি সাফকবলা ও একটি দানপত্র) মাধ্যমে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে মে মাসে ৪২ দশমিক শূন্য ৫ একর (৪ হাজার ২০৫ শতাংশ) জমির দলিল করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় মনসুর আহমেদ ও হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারির নামে ৬ দশমিক ৪৭ একর (৬৪৭ শতাংশ) জমির দলিল হয়েছে। এসব দলিলে দাতা হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের অনেকের ঠিকানা রাজধানী ঢাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৪১৫ নম্বর দলিলের মাধ্যমে ১০ দশমিক ৯ একর (১ হাজার ৯০ শতাংশ) জমি কেনা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। গড়ে প্রতি শতাংশের দাম পড়েছে ৫০৪ টাকা। ৩৮১ নম্বর দলিলে আড়াই লাখ টাকায় কেনা হয়েছে ৪৮০ শতাংশ। প্রতি শতাংশের দাম পড়েছে ৫২০ টাকা। ৩২৫ নম্বর দলিলে জমি কেনা হয়েছে ১ হাজার ২৮০ শতাংশ, দাম ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি শতাংশ ৫০০ টাকা। ৩২৬ নম্বর দলিলে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৮৭৫ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। প্রতি শতাংশ পড়েছে ৫০২ টাকা। ৫৪০ নম্বর দলিলে (দানপত্র) ৪৮০ শতাংশ জমি আড়াই লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। প্রতি শতাংশ দাম পড়েছে ৫২০ টাকা। এ ছাড়া ৬৮১ নম্বর দলিলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ৬৪৭ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। প্রতি শতাংশ দাম পড়েছে প্রায় ২০১ টাকা। ছয়টি দলিলের জমির মূল্য গড় করলে প্রতি শতাংশ পড়ে ৪৬৫ টাকা। উপজেলা প্রশাসনের নথি বলছে, বাহেরচরটি জেগে ওঠার পর এখন পর্যন্ত ছয়টি দলিল খুঁজে পাওয়া গেছে। সব জমিই জাওয়াদুরের কবজায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জাওয়াদুর ও তাঁর সহযোগীরা ভুয়া দাগ, খতিয়ান ও দাতার নাম উল্লেখ করে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করলেও উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সরকারের জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। তবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাজেদুর রহমান খান বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রশাসন অধিশাখায় যুগ্ম সচিব হিসেবে সংযুক্ত আছেন। পরে আর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কি না, জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসককে দেওয়া ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়, যেসব দলিলের মাধ্যমে চরের জমি কেনা হয়েছে, ওই সব দলিলের দাগ ও খতিয়ানের সঙ্গে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে থাকা তথ্যের সঙ্গে মিল নেই। যেমন একটি দলিলের (৪১৫ নম্বর) প্রথম পাতায় মৌজার নাম উল্লেখ রয়েছে সোনাপুর তাজপুর (প্রকাশ্যে বাহেরচর) মৌজা। আবার একই দলিলে মৌজার নাম লেখা হয়েছে চরভৈরবী। ব্যক্তির নামে জমির দলিল হলেও জরিপবিহীন এই ভূমিতে সরকারের স্বার্থ নিরঙ্কুশভাবে বিদ্যমান রয়েছে। এই জমি হস্তান্তরের কারণে ভবিষ্যতে অন্যান্য আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ দায়িত্ব নেওয়ার পর বাহেরচরের ওই জায়গায় দিয়ারা জরিপ করতে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভূমিসচিবের কাছেও হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে চিঠি দেন তিনি।
ভূমিসচিবের কাছে দেওয়া চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেছেন, নির্ভরযোগ্যহীন খতিয়ান ও জমাবন্দী দিয়ে পাঁচটি সাফকবলা দলিল ও একটি দানপত্র সম্পাদন করেছেন তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় এ বিষয়ে ভূমিসচিবের কাছে নির্দেশনা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইমচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাহেরচরের দলিল হওয়া জমি নিয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসককে খাসজমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি সরকারি জমি বেহাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্যহীন খতিয়ান ও এবং জমাবন্দী দিয়ে দলিল সম্পাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ১৬ মার্চ অসীম কল্লোল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই চরের দিয়ারা জরিপ হয়েছে কি না, তিনি জানেন না। অসীম বলেন, ‘আমরা খাজনা পেয়েছি, দাখিলা ও পরচা পেয়েছি। তাই দলিল করে দিয়েছি।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ দুজন কর্মকর্তা বলেন, বাহেরচরে দিয়ারা জরিপ হয়নি, এটা সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে অসীম কল্লোলের না জানার কথা নয়। দাখিলা ও পরচা যে জাল ছিল, এ তথ্যও তাঁর জানা ছিল।
ওই এলাকার ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে জবরদখল করে মানুষকে জমি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই দখলদারদের পক্ষে ছিল। তাই ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এই জুলুম বন্ধ হওয়া দরকার।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাহেরচরে দিয়ারা জরিপ করার বিষয়টি এখন কোন অবস্থায় আছে, তা তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে দেখবেন।
‘এটা মন্ত্রীর ভাইয়ের খামার’
জাওয়াদুরের দখলে থাকা খাসজমির বর্তমান অবস্থা দেখতে ১৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান এই প্রতিবেদক। দেখা যায়, চারপাশেই নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া। বেষ্টনী টপকে ভেতরে ঢুকতে চাইলে স্থানীয় এক নারী নিষেধ করেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ভেতরে যাওয়া নিষেধ। এটা মন্ত্রীর ভাইয়ের খামার।’
কিছুটা চুপিসারে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির চারটি পুকুর। নানা প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা মাছ বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসবের দেখভাল করছেন কয়েকজন শ্রমিক। পাশে আরও দুটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। দুটি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি তুলে তা দুটি ট্রাকে রাখা হচ্ছে। এসব মাটি নিয়ে ফেলা হচ্ছে পাড়ে।
পুকুরের দুই পাশেই রোপণ করা হয়েছে নারকেল, আম, লিচু ও সুপারিগাছ। চাষ করা হয়েছে নানা জাতের সবজির। রয়েছে গবাদিপশুর খামার। পালন করা হচ্ছে কবুতর। শ্রমিকদের ঘরও রয়েছে সেখানে।
মেঘনার পাড়ে তৈরি করা এই খামারে পুকুরের এক পাশ থেকে আরেক পাশে যেতে ১০ মিনিট লেগেছে এই প্রতিবেদকের।
জাওয়াদুর ও সালাউদ্দিন তাঁদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে এই প্রকল্পের নাম রেখেছেন ‘জে এস অ্যাগ্রো ফিশারিজ অ্যান্ড ডেইরি ইন্টারন্যাশনাল’।
স্থানীয় মানুষজন বলেছেন, চরের জমি নিজেদের কবজায় নেওয়ার পর ওই জায়গার নামও পরিবর্তন করেছেন মন্ত্রীর ভাই। তিনি নিজের ডাকনামের সঙ্গে মিল রেখে এর নাম দিয়েছেন ‘টিপুনগর’। ‘টিপুর ঘের’ বললেও বাহেরচর দেখিয়ে দিচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। সেখানে মন্ত্রীর ভাই নিজের নামে একটি বাজারও বসিয়েছেন। নাম দিয়েছেন টিপুর বাজার।
তাঁদের ভাষ্য
ভাই জাওয়াদুর রহিমের বিপুল পরিমাণ খাসজমি হস্তগত করার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ই-মেইলে পাঠানো প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেন, তাঁর ভাই ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ক্রয় করেছেন। কোনো জমি দখল করেননি। ক্রয় করা জমিতে খামার করেছেন। নাম পরিবর্তনের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, কিছু উৎসাহী লোক সেখানে তৈরি করা বাজারটির নাম করতে চেয়েছিলেন টিপুনগর। তাতে তাঁর ভাই সম্মতি দেননি। তাঁর প্রভাব খাটানোর কথা অবান্তর।
খাসজমি দলিল করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাওয়াদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, হাইমচর উপজেলা ভূমি অফিস যে প্রতিবেদন (জেলা প্রশাসকের কাছে) দিয়েছে, তা সত্য নয়। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রি অফিস থেকে তাঁদের ডাকা হয়েছিল। পরে বলেছে, সব ঠিক আছে। তিনি জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে, এর মধ্যে তাঁর খামার করা জমি নেই।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ প্রথম আলোকে বলেন, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, বাহেরচরে খাসজমি দখল করে খামার করা হয়েছে। পুরো জায়গাই খাসজমি কি না, তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন। দিয়ারা জরিপ না হলেও সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওই সব জায়গা ব্যক্তির নামে দলিল করে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা ভূমি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
সরকারের জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আইনসচিবকে পত্র দেওয়া হয়েছে। দলিলগুলো বাতিলযোগ্য কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি বাতিল হয়, তবে বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করব।’