পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে জীবন দিতে হলো আরও ছয়জনকে। বরিশালের গৌরনদীতে শনিবার ভোররাতে ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন চালক ও তাঁর শ্বশুরসহ তিনজন। আর গাইবান্ধা সদর উপজেলায় একই রাতে বাসে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় দগ্ধদের মধ্যে মা-ছেলেসহ আরও তিনজন গতকাল মারা গেছেন। এ নিয়ে গাইবান্ধার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল সাতে।
গাইবান্ধা: সদর উপজেলার তুলসীঘাট এলাকায় শুক্রবার রাতে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ শিশু সুজন মিয়া (১০) গতকাল ভোররাতে এবং তার মা সোনাভানু বেগম (৪৩) গতকাল বিকেলে মারা গেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একই হাসপাতালে গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে মারা যান সাজু মিয়া (২৮)। মারা যাওয়া সোনাভানু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের তারা মিয়ার স্ত্রী। সাজু মিয়ার বাড়ি একই উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে।
এর আগে ঘটনাস্থলে শিশুসহ চারজন নিহত হন। তাঁরা হলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কালিরখামার গ্রামের খয়বর আলীর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), মধ্যপাড়া খামার গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী রানী (৬), চণ্ডীপুর গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (১০) ও পশ্চিম সীচা গ্রামের আবু সাঈদের স্ত্রী হালিমা বেগম (৪০)।
শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সুন্দরগঞ্জের সীচা থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে নাপু পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি গাইবান্ধা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসার পর সেখান থেকে পুলিশি পাহারায় অন্তত ২৫টি যানবাহন একসঙ্গে ঢাকার পথে অগ্রসর হয়। যানবাহনের বহরটি রাত সোয়া ১১টার দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলসীঘাট পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে চারজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। দগ্ধ হন ৪০ জন। অন্যরা বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে রক্ষা পান। দগ্ধদের মধ্যে শুক্রবার রাতেই ২২ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন দুজন। ১৬ জনকে সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গাইবান্ধা সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক শফিউর রহমান গতকাল বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং দগ্ধ ২৫ জনের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
গৌরনদীতে ট্রাকে পেট্রলবোমা: গৌরনদীতে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ট্রাকচালক ইজায়েদুল মিয়া (৩৫), তাঁর সহকারী মুন্না বিশ্বাস (৪৫) ও চালকের শ্বশুর মোতালেব হোসেন (৬৫)। ইজায়েদুলের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার জুমরাকান্দি গ্রামে, মুন্নার বাড়ি একই উপজেলার গোয়ালচামট গ্রামে এবং মোতালেবের বাড়ি একই উপজেলার তাম্মুখান ব্যাঙডোবা গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও পুলিশ জানায়, গাজীপুরের বাঘের বাজার থেকে পোলট্রির খাবার বোঝাই করে রাত আটটার দিকে ট্রাকটি নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হন ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারী। পথে ফরিদপুর থেকে তাঁরা ট্রাকে তুলে নেন মোতালেব হোসেনকে। ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ট্রাকটি বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া গ্রামে বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে হাওলাদার বাড়ির কাছে পৌঁছালে ট্রাকটিতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ট্রাকটিতে আগুন ধরে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের একটি মেহগনি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. আইনুল ইসলাম জানান, ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগে ট্রাকের সামনের অংশ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, অগ্নিদগ্ধ তিনজনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার আগেই তাঁরা মারা যান।
গতকাল সকালে বরিশাল-১ আসনের সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ন কবির, জেলা প্রশাসক শহিদুল আলম ও জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম এহসান উল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গৌরনদী থানার ওসি মো. সাজ্জাত হোসেন জানান, ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জুবায়ের পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে গতকাল বিকেলে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।