খুনি ভাড়া করে দেশ ছাড়েন অন্যতম সন্দেহভাজন মুসা
রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার কয়েক দিন আগে দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
মুসা হলেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য। তিনি মতিঝিল এজিবি কলোনিতে যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। সম্প্রতি জামিন পাওয়া এই মামলার আসামিরা জাহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন।
রিজভী হাসান হত্যা মামলার বাদী তাঁর বাবা আবুল কালাম, যিনি জাহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ। মামলাটি মিটমাটের জন্য মুসাসহ আসামিরা জাহিদুলের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন।
জাহিদুল হত্যা মামলায় তদন্তসংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণা, অপরাধ জগৎ ও দলীয় প্রতিপক্ষ জাহিদুলকে খুন করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করেছে।
জাহিদুল হত্যার পর পুলিশ ও র্যাব সন্দেহভাজন হিসেবে যাঁদের খুঁজছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মুসা। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ধারণা, মুসা খুনি ভাড়া করাসহ অন্যান্য পরিকল্পনা শেষে দুবাই চলে যান। সেখান থেকে জাহিদুল হত্যার বিষয়টি তদারকি করেন।
জানতে চাইলে আজ মঙ্গলবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর দেশে মুসার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে হয়তো দেশ ছেড়েছেন তিনি।
রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা জামে মসজিদের কাছে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি নিজের মাইক্রোবাসে বাসায় ফিরছিলেন। গাড়িটি যানজটে পড়ার পর একটি মোটরসাইকেলে করে আসা হেলমেট পরা এক যুবক জাহিদুলকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিতে কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামালও নিহত হন।
এ ঘটনায় করা মামলা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করছে। র্যাবও ছায়া তদন্ত করছে।
এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য জানতে জাহিদুলের স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলামকে র্যাব কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁকে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে টিকাটুলীতে র্যাব-৩ কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, কয়েকটি তথ্য যাচাইয়ের জন্য জাহিদুলের স্ত্রীকে ডাকা হয়েছিল।
এদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, তাঁকে জাহিদুলের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত রোববার তাঁকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোন করে এই হুমকি দেওয়া হয়।
রিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফোনের ওপাশ থেকে কয়েকবার বলা হয়, ‘হ্যালো, টিপুকে চেনেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আপনি তো ভালোই আছেন। দুই স্কুল তো সকাল-বিকেল ভালোই চালাচ্ছেন।’ তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন।