ক্যাসিনোতে যুক্ত নেপালি জুয়াড়িরা সীমান্ত অতিক্রম করেছেন
ঢাকায় ক্যাসিনো–কাণ্ডে যুক্ত নেপালিদের অবস্থান জানতে পারেনি র্যাব। তাদের ধারণা, অভিযানের পরপরই তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে গেছেন। এসব ক্যাসিনোতে শতাধিক নেপালি কাজ করতেন। তাঁরা ব্যালিজ এন্টারটেইনমেন্ট নামের একটি আন্তর্জাতিক জুয়া পরিচালনা কোম্পানির কর্মচারী বলে জানা গেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীর ঢাকা গোল্ডেন ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালান। ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের পর চারটি ক্যাসিনো সিলগালা করে দেওয়া হয়।
অভিযানের পরপরই র্যাব জানতে পারে এসব অবৈধ ক্যাসিনোতে কারিগরি কাজ করতেন একদল নেপালি। ওই দিন রাতে তাঁদের ধরতে নয়াপল্টনে ও সেগুনবাগিচায় অভিযান চালায় র্যাব। কিন্তু অভিযানের আগেই ১৩ নেপালি পালিয়ে যান। পরে তাঁদের বাসায় গিয়ে ছয়জন নেপালির পাসপোর্ট উদ্ধার করে র্যাব। যাঁদের পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন প্রসয়ন প্রবীণ, সিধাই নিরোজ, ড্যাঙ্গল বিকাশ নান, নাকর্মি গৌতম, রণজিৎ বচ্চন ও নয়াজি শেরেস্থা।
অভিযানের সঙ্গে যুক্ত র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যে বাড়িতে নেপালিরা থাকতেন, সেই বাড়ির সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তাঁরা পালিয়ে যান।
নেপালিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে পুলিশ রমনা থানার কনস্টেবল দীপঙ্কর চাকমা ও ডিএমপির প্ররক্ষা বিভাগের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম হোসেন ওরফে মিঠুকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আক্তারকে শনাক্ত করে। তাঁর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, র্যাব তদন্ত করে জানতে পারে, ক্লাবের পাশাপাশি ফ্ল্যাটে চলা ক্যাসিনোতে শতাধিক নেপালি যুক্ত ছিলেন। তাঁরা ভ্রমণ ভিসায় এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
র্যাব-৩–এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নেপালিদের ভারতে যেতে পাসপোর্ট লাগে না। অভিযানের পর তাঁরা সেই সুযোগ নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। তবে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে র্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন। র্যাব সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, পালিয়ে যাওয়া নেপালিদের সিসিটিভির ফুটেজসহ তাঁদের কাছে ছয়জনের ছবিযুক্ত পাসপোর্ট রয়েছে। এসব দেখে তাঁদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, নেপালিদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা চলছে। তাঁরা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে তাঁরা বলতে পারছেন না।
ব্যাংক হিসাব জব্দ
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের ব্যাংক হিসাব স্থগিত (ফ্রিজ) করা হয়েছে। এর ফলে তাঁদের নিজেদের, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করা যাবে না। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে।
এর আগে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এস এম গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।