পঞ্চগড়ে ঋণ জালিয়াতি
কৃষকের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ
কৃষকেরা ব্যাংকে গিয়ে জানলেন তাঁদের নামে ঋণের কথা। জালিয়াতির হোতা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী তবিবর।
রাজমিস্ত্রি আমিনার রহমান লোকমুখে শুনেছেন, তাঁর নামে পঞ্চগড়ের টুনিরহাট অগ্রণী ব্যাংক শাখায় একটি কৃষিঋণ আছে। এরপর তিনি ওই ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ঘটনা সত্যি। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর ওই ব্যাংক থেকে তাঁর নামে আলু চাষ বাবদ ৬৭ হাজার টাকা শস্যঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তিনি কোনো ঋণ নেননি, এমনকি ঋণের জন্য আবেদনও করেননি।
আমিনারের চাচাতো ভাই স মিলের শ্রমিক শরিফুলের নামেও ৬৫ হাজার টাকার ঋণ হয়েছে গত বছরের প্রায় একই সময়ে। ঋণের বিষয়টি শরিফুলেরও জানা নেই।
শুধু আমিনার ও শরিফুল নন, অগ্রণী ব্যাংকের এই শাখায় এমন অনেকের নামে ঋণ জালিয়াতির খোঁজ পাওয়া গেছে। গত মাসের শেষের দিকে অন্তত ১০ ব্যক্তি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তাঁরা ঋণ জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।
জানা গেছে, এই জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা তবিবর রহমান। তিনি ব্যাংকটির অস্থায়ী মাঠ সহকারী। কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ে কাজ করেন তিনি। অভিযোগ ওঠায় ৮ অক্টোবর তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
যেভাবে জালিয়াতি হয়েছে
আমিনারের বাড়ি পঞ্চগড় সদরের কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের লস্করপাড়ায়। তাঁর সঙ্গে কথা হয় ৫ অক্টোবর। বললেন, ‘আমরা তিন ভাই—কেউই কৃষির সঙ্গে যুক্ত নই। রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাই। একদিন লোকমুখে শুনে ব্যাংকে গিয়ে দেখি, আমি নাকি ঋণ নিয়েছি।’
আমিনার জানান, গত বছর আলুর মৌসুমে তাঁর চাচা আবদুল হক ঋণ ওঠানোর জন্য তাঁকে সাক্ষী করেন। একইভাবে সাক্ষী করা হয় চাচাতো ভাই শরিফুলকে। কিন্তু এখন জানতে পারছেন, সাক্ষীর কথা বলে ঋণের কাগজে সই নেওয়া হয়েছে।
আমিনার ও শরিফুলের নামে ঋণ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন আবদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাঠ সহকারী তবিবর তাঁকে সহযোগিতা করেছেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, গত কয়েক বছরে ব্যাংকটি ঘিরে ভয়ংকর একটি দালাল চক্র তৈরি হয়েছে। মাঠ সহকারী তবিবরের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ফারুক, সামছুজ্জামান ও শরিফুল কাজ করতেন। এই চক্রের সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। চক্রটি অভাবী মানুষদের শস্যঋণ করে দেওয়ার নামে জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
টুনিরহাট অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে দফাদার পাড়া। সেখানকার বাসিন্দা আইজুল, গোলাম, আমিনার ও আমিনুর। তাঁদেরও অভিযোগ, প্রতিবেশী হোটেল ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর সাক্ষী করার কথা বলে তাঁদের প্রত্যেকের নামে ঋণ তুলেছেন।
ট্রাকচালক গোলাম হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত বছর প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর আমাকে একটি ঋণের সাক্ষী হতে বলেন। তিনি আমাকে সই দিতে ব্যাংকে নিয়ে যান। সেখানে আমার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি সই নেওয়া হয়। এখন শুনছি, আমার নামে ঋণ তোলা হইছে।’
মোস্তাফিজুর নিজে ও তাঁর মায়ের নামে দুটি কৃষিঋণ নিয়েছেন। তাঁর দাবি, মাঠ সহকারী তবিবরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো হওয়ায় তিনি অন্যদেরও ঋণ পেতে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তিনি অন্যদের নামে ঋণের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন কি না, জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
তবে ভুক্তভোগী আমিনার বলছেন, সাক্ষী করার কথা বলে তাঁদের নামে ঋণ করেছেন মোস্তাফিজুর। ঘটনা জানাজানির পর তাঁকে চাপ দিলে তিনি এ মাসের মধ্যেই ঋণ পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে তাঁরা আইনের আশ্রয় নেবেন।
ব্যাংকটির তথ্য বলছে, শুধু ২০১৯-২০ অর্থবছরে শস্যঋণ বাবদ ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছিল। আমন, আলু ও বোরো মৌসুমে মোট ৬৭২ জন এই ঋণসুবিধা পান। ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যথাক্রমে ২ কোটি ৮ লাখ, ২ কোটি ৬৩ লাখ ও ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত শস্যঋণ বাবদ বিতরণ করা হয়েছে ২৪ লাখ টাকা।
মো. সফিউল্লাহ ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। বর্তমানে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের পঞ্চগড় শাখায় দ্বিতীয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
সফিউল্লাহ তাঁর সময়কার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি থাকাকালীন এমন কর্মকাণ্ড হয়নি এবং হওয়ারও সুযোগ ছিল না।
জাফর আলীর বাড়ি একই ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়ে। তাঁর নামে গত মার্চে বোরো আবাদ বাবদ ৬৫ হাজার টাকা কৃষিঋণের টাকা তোলা হয়েছে। জাফরের দাবি, গত জানুয়ারিতে তিনি গরু ব্যবসায় লোকসানে পড়ে ঋণের আবেদন করেছেন। কিন্তু ঋণ দেওয়া হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে তিনি কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান। এখন শুনছেন, তাঁর নামে ঋণ হয়েছে। এ ঘটনায় ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে ১৪ অক্টোবর তিনি পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা করেছেন।
জাফরের অভিযোগ, ব্যাংকটির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ফারুক ও শামছুজ্জামান তাঁর নামে ঋণের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারুক ও শামছুজ্জামান।
ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক ইব্রাহিম আলী দাবি করেন, তিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন। তখন থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।
তবে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলছেন, তিনি বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন। কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঋণের টাকা ভাগাভাগি
গত ২২ মার্চ বোয়ালমারীর হোটেল-রেস্তোরাঁর বাবুর্চি কামরুজ্জামানকে বোরো মৌসুমের শস্যঋণ বাবদ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কামরুজ্জামান বলেন, ব্যাংক ম্যানেজারসহ দু-তিনজন কর্মকর্তা ব্যাংকে তাঁর হাতে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হলে স্থানীয় ফারুক, সাইদুর, শরিফুল ও নরফুল তাঁর কাছ থেকে কাগজপত্র তৈরির খরচা বাবদ ৮ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে কামরুজ্জামান জানতে পারেন, তাঁর নামে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। ৩ আগস্ট তিনি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
কামরুজ্জামানের ঘটনার পর একে একে প্রকাশ হতে শুরু করে ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। এক সপ্তাহে প্রথম আলোর কাছে অন্তত ২০ জন ঋণগ্রহীতা অভিযোগ করে বলেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নামে ৬৫ থেকে ৬৮ হাজার টাকা ঋণ হলেও তাঁরা হাতে পেয়েছেন ৩০ থেকে ৩৪ হাজার টাকা।
গোয়ালপাড়ার অবিনাশ গত বোরো মৌসুমে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো টাকা হাতে পাননি। তাঁর অভিযোগ, ব্যাংকের মাঠ সহকারী তবিবর ও অস্থায়ী কর্মী মোস্তাফিজুর তাঁর কাছ থেকে চেক সই করে নিলেও টাকা দেননি। পরে তাঁকে জানানো হয়, একই এলাকার তপন তাঁর টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।
তপন স্বীকার করেন, তিনি তবিবরের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। আরও বলেন, অবিনাশের ঋণের টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে অবিনাশের টাকা দেওয়া হবে।
লস্করপাড়ার দরিদ্র ভ্যানচালক ইউনুছ আলীকে দালালেরা বলেছেন, ঋণের টাকা শোধ করা লাগবে না। সরকার থেকে আপনা–আপনি মাফ হবে। সে জন্য তিনিও গত বোরো মৌসুমের ঋণের আবেদন করেছেন। পেয়েছেন ৩৪ হাজার টাকা।
কিন্তু পরে তিনিও জানতে পারেন তাঁর নামে ঋণ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তিনি ব্যাংক ম্যানেজার, মাঠ সহকারী তবিবর ও শরিফুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। পরে তবিবর ও শরিফুল ইউনুছকে চাপ দিয়ে আপসনামা লিখে নেন। একইভাবে তাঁরা ভুক্তভোগী আরও কয়েকজনের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন।
অবশ্য ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করছেন তবিবর রহমান। এই প্রতিবেদককে তিনি বললেন, কৃষিঋণ দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি সর্বোচ্চ সুপারিশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কিছু ভুল করতে পারেন। কিন্তু ঋণ বিতরণে বড় কোনো অনিয়ম করেননি।
ঋণ–আতঙ্কে এলাকার মানুষ
২০১৭ সালে লস্করপাড়ার রেজাউল ইসলাম ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ২০১৯ সালে পুনরায় তাঁর নামে ঋণ হয় ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। এ নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ করলে তাঁকে ৩ অক্টোবর গলেহা বাজারে মারধর করেন তবিবর ও তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান। এরপর থেকে অনেক ভুক্তভোগী ঋণ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন।
লস্করপাড়ার পঞ্চাশোর্ধ্ব শকুরউল্লাহ। দেড় মাস আগে আলুর ঋণ করার জন্য অগ্রণী ব্যাংকের টুনিরহাট শাখায় যান। সেখানে মাঠ সহকারী তবিবুর তাঁর কাছ থেকে ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে ঋণের আবেদনপত্রে সই করে নেন। কিন্তু তাঁকে ঋণ দেওয়া হয়নি। অথচ কাগজপত্র তৈরি করে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
এরপর ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হলে গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যাংকে খোঁজ নিতে যান। শকুরউল্লাহ বলেন, তাঁর ঋণের জন্য তৈরি কাগজপত্র পাওয়ার পর ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা সেগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেন।
কৃষিঋণ পাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষিঋণ পেতে হলে আগ্রহী কৃষককে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলতে হবে। তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর ব্যবস্থাপক তাঁর মাঠ সহকারী দিয়ে ওই ব্যক্তির জমি-জায়গা আছে কি না এবং কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা যাচাই করবেন। পরে ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বিষয়টি যাচাই করবেন। প্রয়োজন হলে ব্যবস্থাপক নিজেও মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করতে পারেন।
সবশেষ ঋণগ্রহীতার ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জমির দলিল ও খাজনা প্রদানের দাখিলা যাচাই করে ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন ব্যবস্থাপক। এরপর ঋণগ্রহীতার হিসাব নম্বরে ঋণের টাকা চলে যাবে। এরপর ঋণগ্রহীতা চেকের মাধ্যমে তাঁর হিসাব থেকে টাকা তুলবেন। এর ব্যত্যয় হওয়া যাবে না।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এখানে সব নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। নিয়ম মানা হলে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটত না। এ ঘটনায় ব্যবস্থাপক দায় এড়াতে পারেন না।
অগ্রণী ব্যাংক ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক কার্যালয় বিষয়টি জেনেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। জানতে চাইলে আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপারের কাছে কয়েকজন অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি। এরপর মাঠ সহকারী তবিবরকে বদলি করা হয়েছে।’
হঠাৎ ফুলেফেঁপে উঠেছেন তবিবর
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের সমার উদ্দিনের (৬৫) ছেলে তবিবর রহমান পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০১১ সালের ১ আগস্ট ৩১০ টাকা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে অগ্রণী ব্যাংকের টুনিরহাট শাখায় অস্থায়ী মাঠ সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। ২০১৫ সালে তাঁর দৈনিক হাজিরা বেড়ে হয় ৬৫০ টাকা। সে হিসাবে তিনি মাসে ১৩-১৪ হাজার টাকা বেতন পান।
কিন্তু কয়েক বছরে তবিবর সম্পদ-সম্পত্তিতে ফুলে উঠেছেন। তাঁর প্রতিবেশীরা বলছেন, তবিবর গত কয়েক বছরে ১৮-২০ বিঘা জমি কিনেছেন। গ্রামে ৩০-৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি বানিয়েছেন। এ ছাড়া নামে-বেনামে অনেক অর্থ-সম্পদ করেছেন।
ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের কয়েকজন জানালেন, তবিবর ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার আগে একটি সিগারেট কোম্পানির সেলসম্যান ছিলেন। তাঁর বাবা সমার উদ্দিন অন্যের কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে ভ্যান চালাতেন। তাঁর ছোট ভাই হাবিবুরও ভ্যান চালাতেন। আরেক ভাই দুলু ঢাকায় রিকশা চালাতেন।
তবে তবিবরের দাবি, পৈতৃক সূত্রে তাঁর বাবার প্রায় ৭ বিঘা জমি আছে। এ ছাড়া ৬ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন। ২ বিঘা সরকারি খাসজমি বরাদ্দ পেয়েছেন। আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিঘা জমি তাঁরা কিনেছেন।
টুনিরহাট সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বালাম ঘেঁটে দেখা গেছে, তবিবর বাড়ির আশপাশের এলাকাতেই ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। এসব জমির বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি।
কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেবেশ্বর রায় বলেছেন, ৮-১০ বছর আগে তবিবরের পরিবার খুবই দরিদ্র ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাঁদের অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে।