কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে হামলায় রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমান, অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
কুষ্টিয়ায় একটি মানহানি মামলায় জামিন নিতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। হামলায় তাঁর মাথা ও মুখ জখম হয়েছে। এ ছাড়া তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালত চত্বর ছেড়ে চলে যান মাহমুদুর রহমান।
আজ রোববার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে আদালতের বারান্দা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট কারে ওঠার পর এ হামলা হয়। এ সময় সেখানে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন, আদালতের পরিদর্শক মনির উজজামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে কটূক্তি করে বক্তব্যে দেওয়ায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত ওরফে তুষারের দায়ের করা মানহানি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদ ১০ হাজার টাকা জামানতে স্থায়ীভাবে এই জামিন মঞ্জুর করেন। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত। ওই মামলায় ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার আদালতে জামিন নিতে যান মাহমুদুর রহমান। আদালতে দাঁড়িয়ে জামিন চাইলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে মাহমুদুর রহমান জামিন নিতে আসছেন—এমন খবর পেয়ে আগে থেকে আদালত চত্বরে ছাত্রলীগ সভাপতি ইয়াসির আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও কালো পতাকা মিছিল করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামিন হলেও হামলার ভয়ে আদালতের এজলাসে অবস্থান নেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সেখানে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বললে তিনি বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারে উঠে রওনা হন। গাড়িতে ওঠার পরপরই আচমকা তাঁর ওপর প্রথমে স্যান্ডেল ছুড়ে মারেন ছাত্রলীগের এক কর্মী। এরপর চারদিক থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়ে যায়। এ সময় গাড়ির কাচ ভেঙে কয়েকটি ইট তাঁর মাথায় ও মুখে লাগে। এতে তাঁর গাল, কপাল ও মাথার পেছনে কেটে যায়। হামলার মধ্য থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে গাড়ি থেকে বের করে আইনজীবীরা একটি চেম্বারে নিয়ে যান। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ওই আইনজীবীর চেম্বারে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর চড়াও হন হামলাকারীরা।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আদালতের বারান্দায় বসে মাহমুদুর হামলার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, এখানে প্রয়োজনে জীবন দেব। দেশের জন্য, ইসলামের জন্য জীবন দেব। আদালতের ভেতর হামলার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে পুলিশ আমাকে গুন্ডাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা হয়েছে। এর জন্য একদিন তাদেরও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’ এ সময় সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাঁকে বলেন, ‘হামলার সময় কোথায় ছিলেন। আপনারা তো আমাকে মার খাওয়ালেন। হাসপাতালেও নিয়ে যাচ্ছেন না। আমার সারা মুখ থেকে রক্ত ঝরছে, আমি যন্ত্রণায় দাঁড়াতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা হয়েছে। তবে পুলিশ না থাকলে আরও বড় ধরনের বিপদ হতে পারত।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত ওরফে তুষার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যেহেতু মামলার বাদী। তাই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কে বা কারা হামলা করেছে সেটা জানা নেই। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন।’
আরও পড়ুন...