কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী নিযার্তনের ঘটনার তদন্ত শুরু

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক। আজ রোববার বিকেলে তোলা।
ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা ও ডাকাতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ভারতীয় নাগরিক শাহজাহান বিলাসকে (৬০) নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা আজ রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার দিন সেখানে উপস্থিত কারাগারের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান, কমিটির অপর দুই সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন ও ফেনী কারাগারের জেলার শাহাদাত হোসেন আজ দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে অসেন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল শাহজাহানকে নির্যাতনের সময় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করেন।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখনই তদন্তনাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। মাত্র কাজ শুরু করেছি। ভিডিও ফুটেজ গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করেই আমরা প্রতিবেদন দেব। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ নম্বর সেলের কয়েদি (নং ৭১৫১ /এ) শাহজাহান বিলাস ১২টি ইয়াবা বড়ি, এক পুরিয়া গাঁজা, নগদ ৬০০ টাকাসহ কারারক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। পরে শাহজাহানকে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিলের সামনে ডেকে এনে জ্যেষ্ঠ জেল সুপারের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তাঁকে মালামাল জব্দ ও টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললে, তিনি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন।

এরপর তাঁকে হাত দুটি পিঠমোড়া করে বেঁধে ফ্লোরে ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারের লোকজনের সামনে ওই নির্যাতন চলে। একপর্যায়ে শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে কারা হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে সেলে পাঠানো হয়।

নির্যাতনের এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার কারা অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরিফ, কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস ও চরণ চন্দ্র পালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত হওয়া অনন্ত চন্দ্র দাস এ ঘটনার পর ২ জুলাই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিকে এ নির্যাতনের ঘটনার পাঁচ মিনিট চার সেকেন্ডের একটি ভিডিও গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

আরও পড়ুন

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত দল কুমিল্লায় এসেছে। তারা এখন তদন্ত করছে।

কয়েদি শাহজাহান বিলাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দুর্গাপুর এলাকার আবদু মিয়ার ছেলে। হত্যা ও ডাকাতির মামলায় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৯১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা করেন আদালত। একটি হত্যা মামলায় ৩০ বছর এবং ৩টি ডাকাতি মামলায় যথাক্রমে ১০, ৭ ও ৭ বছর মিলে মোট ৫৪ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। সেই থেকে তিনি এ দেশের বিভিন্ন কারাগারে কয়েদি হিসেবে কাটাচ্ছেন।