কারাগারে বসে আরামে মাদক ব্যবসা
পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নুর আলম। অস্ত্র, মাদক, ছিনতাইয়ের ২০ মামলার আসামি। হামকা বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি হামকা নুর আলম নামে পরিচিত। দুই বছর ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকলেও সেখানে বসেই চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেন কারারক্ষীরা।
সাইফুল ইসলাম নামের এক কারারক্ষীকে গত শনিবার রাতে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ এই তথ্য জানতে পারে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাও জানিয়েছেন, কারাগার থেকে হামকা নুর আলম ফোন করেন। তাঁর নির্দেশনামতো ইয়াবা, গাঁজা কারারক্ষীদের সরবরাহ করা হয়।
এর আগে গত বছরের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ফেনসিডিল ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দীদের মধ্যে ৭০ ভাগ আসামি মাদক মামলার। তাঁরা মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় কারাগারে মাদকের চাহিদা রয়েছে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারারক্ষী সাইফুল জানিয়েছেন, দিদারুল আলম ওরফে মাছুম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ৫০টি ইয়াবা নেন। এর মধ্যে হালিশহর কাঁচাবাজার এলাকার এক ব্যক্তিকে ১০টি দিতে যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। বাকি ৪০টি কারাগারের ভেতর থাকা সন্ত্রাসী হামকা নুর আলমকে দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে তিনি এগুলো চার গুণ দামে বিক্রি করেন।
গত শনিবার রাতে সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গাঁজা সংগ্রহ করে কারাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির মুঠোফোন থেকে ফোন আসে। পরে ফাঁদ পেতে আজিজকে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে নিয়ে রাতে নগরের এনায়েত বাজার এলাকা থেকে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের সহযোগী আলো আক্তার নামের এক নারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, দিদারুল কারাগারে থাকার সময় হামকা নুর আলমের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বের হওয়ার পর থেকে নুর আলমকে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করেন। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেন কারারক্ষী সাইফুল।
কারাগারে থাকা নুর আলমের সঙ্গে দিদারুলের কীভাবে যোগাযোগ হতো প্রশ্নের জবাবে পুলিশকে জানিয়েছেন, নুর আলম ফোন করে কারারক্ষী সাইফুলের মাধ্যমে ইয়াবা পাঠানোর কথা বলতেন। গত শনিবার সকালে আলোর কাছ থেকে ৫০টি ইয়াবা সংগ্রহ করেন দিদারুল। দুপুরে সাইফুল এগুলো দিদারুলের কাছ থেকে বুঝে নেন।
শুধু ইয়াবা নয়, গাঁজাও বাইরে থেকে কারাগারে নুর আলমের কাছে পৌঁছাত। গ্রেপ্তার আজিজুল ইসলাম পুলিশকে জানিয়েছেন, নুর আলম তাঁকে ফোন করে বলেছেন কারারক্ষী সাইফুলকে গাঁজা দিতে। তাঁর কাছ থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে সাইফুল কারাগারে পৌঁছে দিতেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. কামাল হোসেন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের ঘটনায় কারারক্ষী সাইফুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।