ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলির প্রমাণ পায়নি পুলিশ
>
- আজ ২৬ মে একরামুল হক নিহতের এক বছর
- গত বছর কথিত বন্দুকযুদ্ধে একরামুল নিহত হন
- ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলির প্রমাণ পায়নি পুলিশ
- একরামুলকে কেন মরতে হলো জানতে চান স্ত্রী-সন্তান
টেকনাফে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের বিরুদ্ধে র্যাবের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমতি চেয়েছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, মামলার এজাহারে র্যাব বলেছিল, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলিতে একরামুল নিহত হয়েছেন। তদন্তে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস প্রথম আলোকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, র্যাবের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে। তবে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপংকর কর্মকার জানিয়েছেন, তদন্তে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যকার গোলাগুলির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে পাওয়া গেলে এই তথ্য তাঁরা সংযুক্ত করবেন। একরামুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার প্রথম আলোকে বলেছেন, কে কী উদ্দেশ্যে তাঁর স্বামীকে খুন করেছে, সে প্রশ্নের জবাব তিনি আমৃত্যু চাইবেন। আর তাঁদের মেয়ে তাহিয়াত বলেছে, ‘যাঁরা আমাদের কাঁদাচ্ছেন, তাঁদের বিচার যেন হয়।’
আজ ২৬ মে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল হক নিহতের এক বছর। গত বছর কথিত বন্দুকযুদ্ধে একরামুল নিহত হন। তিনি নিহত হওয়ার পর র্যাব–৭ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাত একটার দিকে র্যাব-৭–এর একটি ‘চৌকস আভিযানিক দল’ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার অন্তর্ভুক্ত মেরিন ড্রাইভ এলাকায় অভিযান চালায়। মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র্যাবকে লক্ষ করে এলোপাতাড়িভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে। আত্মরক্ষা ও সরকারি জানমাল রক্ষায় র্যাব পাল্টা গুলি চালায়। গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে। এ সময় ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। আহত ব্যক্তিকে টেকনাফ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নিহত ব্যক্তি কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হক (৪৬)।
একরামুলের মৃত্যুর চার দিন পর কক্সবাজার প্রেসক্লাবে একরামুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার তাঁর স্বামী একরামুল হকের সঙ্গে তাঁর এবং তাঁদের দুই মেয়ের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড শোনান। সেই রেকর্ডে একরামুলকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে গুলি করা পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ থেকে যায়। আয়েশা বলেন, তাঁর স্বামীকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ও র্যাব–৭–এর একটি দল বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। আয়েশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হলফ করে বলতে পারি, একরামুল ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর উপজেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।’
গত বৃহস্পতিবার টেকনাফ পৌরসভার কাইয়ুকখালীয়াপাড়ার বাসায় আয়েশার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এ সময় তাঁর পাশে ছিল দুই মেয়ে তাহিয়াত ও নাহিয়ান। তাদের হাতে ছিল বাবার পুরোনো গেঞ্জি। বাবার শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে তারা বাবার অভাব পূরণের চেষ্টা করে। শেষ স্মৃতি হিসেবে তাদের কাছে আছে বাবার ব্যবহৃত রক্তমাখা চশমা। তাদের অপেক্ষা একরামুল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলোর জন্য। তাদের সঙ্গে একরামুলের তোলা ছবিগুলো আছে ওখানে। ওই ফোনেই তাদের সঙ্গে একরামুলের শেষ কথা হয়েছিল।
গতকাল র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান নিশ্চিত করেছেন, আয়েশা আক্তার তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে বলে যে দাবি করছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব কোনো আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। তিনি বলেন, বন্দুকযুদ্ধে কেউ নিহত হলে ম্যাজিস্ট্রেটকে সনদ দিতে হয়। একরামুলের বেলাতেও সনদ দেওয়া হয়েছে। সেটিই চূড়ান্ত। চৌকস ওই আভিযানিক দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কোথায় এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এটি গোপনীয় তথ্য।