ইয়াবা পাচারে ২২ হুন্ডি ব্যবসায়ী
>
- ক্রসফায়ারে ৭৬ জন নিহত
- ১০২ জনের আত্মসমর্পণ
- তবু পাচার বন্ধ হয়নি
এত দিন শুধু ইয়াবা কারবারি ও বাহকেরা ছিলেন মাদক ব্যবসার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু নেপথ্যে যাঁরা দেশে ইয়াবা আনতে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই হুন্ডি ব্যবসায়ী। কীভাবে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ভারতে ইয়াবা কেনার টাকা পাচার হচ্ছে, তা বের করতে তৎপর হয়ে উঠছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। টেকনাফে এ রকম ২২ জন হুন্ডি ব্যবসায়ীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন দুবাইয়ে বসে হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ মে থেকে গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত চলতি বছরের প্রায় সাড়ে ১০ মাসে টেকনাফ ও কক্সবাজারে ক্রসফায়ারে নিহত হন ৭৬ ইয়াবা ব্যবসায়ী। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ১০২ জন ইয়াবা কারবারিও আত্মসমর্পণ করেছেন। এরপরও ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়নি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
পুলিশ প্রশাসন নতুন করে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর আরও অনেক তথ্য। কারণ, ইয়াবা আমদানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এখনো রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এবার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। তাঁরা প্রায় সবাই হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
মিয়ানমার থেকে দেশে দেদার আসছে ইয়াবা। টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বেশির ভাগ ইয়াবা ঢুকছে। ইয়াবা কারবারি ও বাহকের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তাঁদের তালিকাও তৈরি করেছে। এতে টেকনাফের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম উঠে আসে।
অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক ও অস্ত্রের চোরাকারবারিদের সঙ্গে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের গভীর সম্পর্ক আছে। আমাদের গবেষণায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে মূল হোতারা আইনের আওতায় না এলে ইয়াবার চালান বন্ধ রাখা কঠিন। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে জেলা পুলিশ প্রশাসন যেভাবে কঠোর হয়েছে, তাতে কিছুটা সাফল্য আসতে পারে।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আমিন আমাদের চোখ-কান খুলে দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য এবং আমাদের তদন্তে ২২ হুন্ডি ব্যবসায়ীর পরিচয় পেয়েছি। এরা দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ভারতে ইয়াবার টাকা পাচার করছে বলে নুরুল আমিন স্বীকার করেছে।’
কক্সবাজারের পুলিশ ইতিমধ্যে ২২ হুন্ডি ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে। তাঁরা হলেন টেকনাফের মধ্যম জালিয়াপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, নামার বাজারের বদি আলম, সাতকানিয়ার মো. উসমান (টেকনাফে কাপড়ের দোকান আছে), গোদারবিলের টিক্কা কাদের, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মো. ইসহাক, মো. ইয়াসিন, মো. ওসমান, মো. তাহের ও আবুল আলী (সাংবাদিক), টিটি জাফরের ভাই কালা মিয়া ওরফে ল্যাংগা কালা, ল্যাংগা কালার ছেলে মো. সাইফুল, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মো. খুরশিদ, ডেইলপাড়ার মো. আমিন, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. শফিক, কুলালপাড়ার আবদুর রশিদ ওরফে ভেক্কু ও মো. সাইফুল, কেকেপাড়ার মো. আইয়ুব ওরফে বাট্টা আইয়ুব, নামার বাজারের মো. ইসমাইল, কুলালপাড়ার মো. শওকত, লেঙ্গুর বিলের মোহাম্মদ আলী, পাল্লান পাড়ার মো. ফারুক ও সৈয়দ করিম।
এই ২২ জনের ব্যাপারে প্রথম আলো অনুসন্ধান শুরু করে। তাঁদের মধ্যে জাফর আলম দুবাইয়ে রয়েছেন। শুধু আবুল আলী টেকনাফে আছেন। অন্যরা আপাতত গা ঢাকা দিয়েছেন।