ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
>
- বিমানবন্দর মসজিদের ইমামসহ চারজন আসামি।
- দুজন জামিনে, একজন কারাগারে, একজন পলাতক।
- ইমাম নিজেই ১৮টি সোনার বার আনেন।
- এক আসামি মিসরে পালিয়ে যান।
- বারের সঙ্গে পাওয়া যায় ১৮ হাজার ডলার
ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জামে মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ আসলাম শেখের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) চার বছর তদন্ত শেষে গত সপ্তাহে আসলাম শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
অভিযোগপত্রভুক্ত ব্যক্তিরা একে অপরের পূর্বপরিচিত। অন্যরা হলেন ইমাম আসলাম শেখের বন্ধু মিসরের কায়রোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে তুহিন, তাঁর মামা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন ওরফে ফয়সাল এবং পূর্বপরিচিত হাফেজ মো. তারেক আবদুল্লাহ।
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ১ কেজি ৮০০ গ্রাম ওজনের ১৮টি সোনার বারসহ বিমানবন্দর জামে মসজিদের ইমাম আসলাম শেখকে পুলিশ ২০১৪ সালের ১৯ জুলাই গ্রেপ্তার করে। আসলামের সঙ্গে থাকা তাঁর মামা মোশারফ হোসেন এ সময় পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ডিবির তৎকালীন পরিদর্শক আনিছুর রহমান বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন।
ডিবির তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০১৪ সালে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর জামে মসজিদের ইমাম আসলাম শেখ কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মিসরে যান। মিসরে অধ্যয়নরত তাঁর বন্ধু শরিফুল ও মামা মোশারফের সঙ্গে বসে আসলাম শেখ সোনা চোরাচালানের পরিকল্পনা করেন। শরিফুলই ১৮টি সোনার বার ইমাম আসলামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে দেন। আসলামের দায়িত্ব ছিল সোনা বিমানবন্দরের বাইরে তাঁর পূর্বপরিচিত হাফেজ তারেক আবদুল্লাহর কাছে হস্তান্তর করবেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনার দিন আসলাম শেখ ও মোশারফ তুরস্কের টার্কিশ এয়ারলাইনসের বিমানে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। আসলাম শেখ বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল দিয়ে পার না হয়ে বিমানবন্দর ভবনের দোতলায় ঢুকে ৩ নম্বর বহির্গমন ফটক দিয়ে বের হন। ইমাম থাকার সুবাদে তাঁর এই প্রবেশাধিকার ছিল। তবে গোপন খবরের ভিত্তিতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও ডিবি পুলিশ ৩ নম্বর বহির্গমন ফটকের বাইরে থেকে আসলাম শেখকে ১৮টি সোনার বার ও ১৮ হাজার ২৪০ মার্কিন ডলারসহ আটক করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইমাম আসলাম শেখকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর আসলাম শেখ ও তাঁর তিন সহযোগীকে আসামি করে সোনা চোরাচালান মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের মেকানিক আনিছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আরেকজন মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্য না পাওয়ায় মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
তদন্তকারী সূত্র জানায়, সোনা চোরাচালানে যুক্ত মোশারফ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে যান। অভিযোগ ওঠা তারেক আবদুল্লাহ গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। মামলা হওয়ার পর শরিফুল ২০১৫ সালে মিসর থেকে একবার দেশে এসেছিলেন। তখন তিনি গ্রেপ্তার হননি। এরপর তিনি আবার মিসরে চলে যান। আসলাম শেখ কারাগারে আছেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শরিফুলের গ্রামের বাড়ি নড়াইল আর হাফেজ তারেক আবদুল্লাহর বাড়ি লক্ষ্মীপুরে।