ইনডোর গেমসের নামে শিবালয়ে জুয়ার আসর

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামে ইনডোর গেমস ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে চলছে জুয়া। দুই সপ্তাহ ধরে জুয়ার আসর চললেও প্রশাসন বা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডের ৬০০ থেকে ৭০০ গজ দক্ষিণে মহাদেবপুর গ্রামে বিশাল জায়গাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে জুয়া ও লটারির। গত শনিবার রাত ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঝখানে যাত্রার মঞ্চ। এর পশ্চিমে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল ঘর। এ ঘরে পৃথকভাবে বসানো হয়েছে আটটি জুয়ার আসর। সেখানে ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, ডায়েস, বউ, চরকি ও ডাইসের নামে চলছে জুয়া। যাত্রামঞ্চের পূর্ব পাশে চলছে লটারি। সেখানে পুরস্কারের নামে সর্বসাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

স্থানীয় বরঙ্গাইল গ্রামের সাগর হোসেন ও মহাদেবপুর গ্রামের আবু জাফর বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে জুয়া। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকা, টাঙ্গাইল, পাবনা ও গাজীপুর থেকেও জুয়াড়িরা এখানে আসে। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অটোরিকশা ও ছোট পিকআপে করে লটারির টিকিট বিক্রি করা হয়। জুয়ার ফাঁদে পড়ে স্থানীয় লোকজন টাকাপয়সা খুইয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, সামনে শিক্ষার্থীদের বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা। সন্ধ্যার পর থেকে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোর কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোকন ভূঁইয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জুয়ার এ আসর বসিয়েছেন। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাস আলী ও বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার কাজল সরকার। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আয়োজন করে থাকেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী এসব বেআইনি কাজে সহযোগিতা করছেন।

এসব বিষয়ে জানতে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় খোকন ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

রাতে মুঠোফোনে কল দিলে আব্বাস আলী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘সবাইরে ট্যাহা-পয়সা দেই। পত্রিকায় লেইখ্যা কিচ্ছু অইব না।’

শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুজ্জামান ওরফে তড়িৎ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেউ এর সঙ্গে জড়িত কি না, তা আমার জানা নেই।’

শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে কাজল সরকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক মাস চলবে। ইনডোর খেলার জন্য প্রতি রাতেই জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিক ও নেতাদেরও টাকাপয়সা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন জুয়ার আসর বসানোর অনুমতি দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস বলেন, জুয়া খেলার জন্য তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে জুয়ার আসর উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।