আ.লীগ নেতা জাহিদুল হত্যা: রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঁচ আসামি
আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকসহ (৫২) পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শনিবার এই আদেশ দেন। পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার তাঁদের আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আদালত শুনানি নিয়ে ওই পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এই পাঁচ আসামির অন্যরা হলেন আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশ (৫১) ও আরফান উল্লাহ। এ ছাড়া মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামের আরেক আসামি কারাগারে আছেন।
গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় যানজটে আটকে পড়া গাড়িতে থাকা জাহিদুল ইসলামকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জাহিদুল। সেখানে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এই জোড়া খুনের দায় স্বীকার করে ৫ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তি দেন মাসুম মোহাম্মদ। মাসুমের স্বীকারোক্তির তথ্য বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ছয় বছর আগে মতিঝিলে খুন হওয়া যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবুর পরিবারকে আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন জাহিদুল ইসলাম। ওই খুনের মামলার আসামি সুমন শিকদার মুসা। এ ছাড়া মতিঝিলে ঠিকাদারি ব্যবসা ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন মুসা। এসবের বাধা হয়ে দাঁড়ান জাহিদুল ইসলাম।
মাসুম মোহাম্মদ আদালতের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, এক যুগের বেশি সময় আগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ঝামেলা থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু মাসুম মোল্লা শামীম। শামীমের মুঠোফোন দিয়ে দুই দফা মুসার সঙ্গে তিনি কথা বলেন। শামীম তাঁকে জানান, জাহিদুল খুনের পরিকল্পনা হয় মতিঝিলের রূপালী ক্লাবে। এই পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিলেন মুসা, মানিক, দামাল, শামীমসহ আরও চার থেকে পাঁচজন। মুসার নির্দেশনায় শামীম জাহিদুল হত্যা মিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সংগ্রহের ব্যাপারে মাসুম মোহাম্মদ দাবি করেন, জাহিদুলকে খুন করার আগের দিন সন্ধ্যায় শামীমকে সঙ্গে নিয়ে কমলাপুরের আইসিডির কাছে যান। সেখানে ৩০ বছর বয়সী কালো রঙের এক যুবকের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। ওই যুবকের কাছ থেকে শামীম মোটরসাইকেল ও একটি ব্যাগ বুঝে নেন। পরে শামীম মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। তিনি বসেন পেছনে। পরে তাঁরা চলে আসেন মতিঝিলের এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলের সামনে। তবে শামীমের মুঠোফোনে একটা খুদে বার্তা আসে। তাতে লেখা ছিল, জাহিদুলকে এখানে পাওয়া যাবে না।
পরে আবার দুজন মিলে গোড়ান ছাপরা মসজিদের কাছে যান। যে যুবকের কাছ থেকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল নিয়েছিলেন, তাঁকে সেখানে দেখতে পান। পরে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দিয়ে সেদিনের মতো যে যাঁর বাসায় চলে যান। আবার পরদিন ২৪ মার্চ দুজন কমলাপুরে ওই যুবকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও অস্ত্র নিয়ে গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলের সামনে আসেন।
জাহিদুলকে গুলি করে হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে মাসুম দাবি করেন, তাঁরা সেখানে যাওয়ার পর সাদা রঙের মাইক্রোবাসে চেপে বসেন জাহিদুল। পরে মাইক্রোবাসটিকে অনুসরণ করতে থাকেন। জাহিদুলকে বহনকারী মাইক্রোবাস যখন আমতলা রেললাইন সিগন্যালের কাছে আসে, তখন সেখানে ছিল যানজট। তখন শামীম মোটরসাইকেল চালিয়ে মাইক্রোবাসের ঠিক উল্টো দিকের সড়কে আসেন। তখন তিনি জাহিদুলের কাছে গিয়ে গুলি করেন। পরে আবার শামীমের মোটরসাইকেলে করে গোড়ানে গিয়ে সেই যুবকের কাছে মোটরসাইকেল ও অস্ত্র বুঝিয়ে দেন। পরে সোহেল নামের এক বন্ধুর গাড়িতে করে তিনি বগুড়ায় যান। সেখানকার একটি হোটেল থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।