‘আমার মিরাজ কো, মিরাজরে আইনা দে’

সুজন ওরফে মিরাজ খার লাশের বাম হাতের কবজি এখনো উদ্ধার হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, মুঠোফোনের সূত্র ধরে তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই অপরাধীরা শনাক্ত হবেন।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নিহত কিশোর মিরাজের বাড়িতে চলছে মাতম।প্রথম আলো

‘আমার মিরাজ কো, তোরা আমার মিরাজরে আইনা দে। ওরে আমার বেটারে, কারা মাইরা ফেলাইলো রে’—এসব বলে বিলাপ করছিলেন এক মা। তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মার চর থেকে পুঁতে রাখা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা নবম শ্রেণির ছাত্র সুজন ওরফে মিরাজ খার মা হাসনা বেগম। বুধবার  কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার মাকে এভাবে বিলাপ করতে দেখা যায়। তার ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাই মিলে মাতম করছিলেন।

এদিকে সুজন ওরফে মিরাজ খার লাশের বাম হাতের কবজি এখনো উদ্ধার হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, মুঠোফোনের সূত্র ধরে তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই অপরাধীরা শনাক্ত হবেন।

নিহত কিশোর সুজন ওরফে মিরাজ খা।
সংগৃহীত

কিশোরের ছোট বোন বৃষ্টি আক্তার বলছিল, গত ২৭ আগস্ট মাকে নিয়ে এক ভাই ফরিদপুরে চিকিৎসক দেখাতে যান। সন্ধ্যায়ও মা ফিরে আসেনি দেখে মিরাজ তার কাছে ভাত চায়। খাওয়ার সময় ফোনে কল আসে। জরুরি কাজ আছে বলে সে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সে সেজ ভাই সজিবের নম্বরে ফোন করে মায়ের খবর জানতে চেয়েছিল।

মিরাজের ভাই সজিব বলছিল, ‘মা বাড়ি আসেনি বলার সঙ্গে সঙ্গে ভাই ফোন কেটে দেয়। এ সময় মিরাজের কণ্ঠটা কেমন যেন লাগছিল। মা রাত ৮টার দিকে বাড়ি এসে মিরাজের ফোনে কল করেন। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ৯টার দিকে বড় ভাই সেলিম বাড়ি এলে সেও ফোনে চেষ্টা করে বন্ধ পান।’

বড় ভাই সেলিম খা বলেন, চার ভাইয়ের মধ্যে মিরাজ ছোট হওয়ায় সবার আদরের ছিল। পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো কাজ তিনি করতেন না। কারও সঙ্গে ভাইয়ের কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি ভাই হত্যার বিচার চান। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

৩১ আগস্ট সোমবার দুপুরে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি এলাকায় পদ্মার চর থেকে পুতে রাখা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে পরিবারের লোকজন লাশটি সুজন ওরফে মিরাজ খার বলে শনাক্ত করেন। এ সময় কিশোরের বাম হাতের কবজি ছিল না। ডান হাত কাঁধ থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আলাদা করা ছিল। পিঠে তিনটি ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিল। সে দেবগ্রামের উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের সিরাজ খার ছেলে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-তায়াবীর বলেন, এখন পর্যন্ত হাতের কবজি উদ্ধার হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার বা ক্লু উদ্ধার হয়নি। তবে মুঠোফোনের সূত্র ধরে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদী। লাশ উদ্ধারের পরের দিন মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।