আতিয়া মহল বিস্ফোরকমুক্ত, কাল ঢুকবেন বাসিন্দারা
সিলেটে জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল বিস্ফোরকমুক্ত ঘোষণা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। আজ সোমবার বিকেলে পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলের পাশে একটি বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব-৯–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু হায়দার আজাদ এ ঘোষণা দেন। ঘোষণার পরপরই আতিয়া মহল সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৯–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু হায়দার আজাদ বলেন, নয়টি অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সামগ্রী উদ্ধার করে আলামত হিসেবে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিচতলার একটি ইউনিটে জঙ্গি আস্তানা ছিল। কিন্তু নিচতলার ছয়টি ইউনিটে পাওয়া গেছে বিস্ফোরক সামগ্রী। এতে করে জঙ্গিরা পুরো ভবনটি ধ্বংসের মুখে রেখেছিল।
আবু হায়দার জানান, সেনাবাহিনীর অভিযান শেষ হলেও বাড়িটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। অপারেশন ক্লিয়ারের শুরুতে বাড়িতে পড়ে থাকা দুই জঙ্গির লাশ উদ্ধার করে পুলিশে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিটি ফ্ল্যাটের প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিতে শুধু নিচতলায় বিস্ফোরক মেলে। বাকিগুলোতে কোনো ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি। বর্তমানে আতিয়া মহল পুরোপুরি বিস্ফোরকমুক্ত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবিরোধী এ অভিযান সবার জন্য একটি বার্তা। আতিয়া মহলের অভিযান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় জনসাধারণ ও বাড়ির মালিকদের জন্য শিক্ষণীয় আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বাসুদেব বণিক। তিনি জানান, আজ রাতে সিআইডির ক্রাইম সিন দল সর্বশেষ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করবে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাড়ির মালিকের উপস্থিতিতে বাসিন্দাদের আতিয়া মহলে ঢুকতে দেওয়া হবে। আতিয়া মহলের বাসিন্দাদের যাতায়াতে আর কোনো ঝুঁকি নেই বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের উপকমিশনার বলেন, ‘আমরা জানি, এ বাড়ি থেকে বাসিন্দারা এক কাপড়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমরা চাই বাসিন্দারা যেন তাঁদের ব্যবহৃত কক্ষ যেভাবে ফেলে গিয়েছিলেন, সেভাবেই পান। এ ক্ষেত্রে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি-পাঠানপাড়ার পাঁচতলা আবাসিক ভবন আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত ২৩ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটায় ঘিরে রাখে পুলিশ। পরদিন ২৪ মার্চ ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট অভিযানে অংশ নেয়। ২৫ মার্চ সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন ও বিশেষায়িত কমান্ডো দল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান শুরু করে।
প্রথম দিনের অভিযান চলাকালে সন্ধ্যায় ও রাতে দুই দফা বিস্ফোরণে র্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন। আহত হন ৪৪ জন। ১১১ ঘণ্টা পর ২৮ মার্চ সেনাবাহিনী সফলভাবে অভিযান শেষ করে। এর আগে বাড়িটির ২৮টি ফ্ল্যাটে আটকা পড়া ৭৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিরাপদে বের করে আনেন সেনা কমান্ডোর সদস্যরা।
আতিয়া মহলে সেনবাহিনীর অভিযান শেষে ৪ এপ্রিল থেকে র্যাব বিস্ফোরকমুক্ত করতে ‘অপারেশন ক্লিয়ার আতিয়া মহল’ নামে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের সাত দিনের মাথায় আজ সোমবার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ষষ্ঠ দিনের তল্লাশি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।