আগে থেকেই অপকর্মে ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতরা
সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাস ও আশপাশের এলাকায় ঘুরতে যাওয়া মানুষের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটত। অনেক দিন ধরে এসব অপকর্মে জড়িত ছিলেন ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীরাসহ ছাত্রাবাসকেন্দ্রিক একটি গ্রুপ।
কিন্তু ভয়ে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলতেন না। গত শুক্রবার রাতে কলেজ ফটক থেকে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনার পর ছাত্রলীগের একাংশের ছাত্রাবাস দখলকেন্দ্রিক নানা অপরাধের কথা প্রকাশ পাচ্ছে।
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সামনের সড়কটি গিয়ে মিলেছে টিলাগড় মোড়ে। এ মোড় থেকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক হয়ে জাফলংসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় যাওয়া যায়। অনেকে টিলাবেষ্টিত এমসি কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাস এলাকায় বেড়াতে যান। ছাত্রাবাসের এক পাশে রয়েছে আলুরতল নামে একটি নির্জন টিলা। সেখানে বেড়াতে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। টিলাগড় পয়েন্টের একাংশে যানবাহন থেকেও চাঁদাবাজি হতো বলে অভিযোগ আছে।
কলেজ ছাত্রাবাসে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী পদে কাজ করতেন, এমন একজনের সঙ্গে কথা হয় ছাত্রাবাসের পাশের আরামবাগ আবাসিক এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মচারী বলেন, গত ঈদুল আজহার আগে দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দু-চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন।
থানা–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ছিনতাইয়ের শিকার বেশির ভাগ ব্যক্তিই থানা–পুলিশে অভিযোগ করতে যান না। শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসের আশপাশ এলাকায় করোনাকালে কোনো ছিনতাইয়ের মামলা হয়নি। ছিনতাইয়ের অভিযোগে সাত-আটটি সাধারণ ডায়েরি থাকতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত মার্চ থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এমসি কলেজে ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগের অংশটি নির্বিঘ্নেই ছাত্রাবাসে থাকত। স্থানীয় লোকজন জানান, রাতে তাঁদের হুল্লোড়-শোরগোল শোনা যেত। রাতে ছাত্রাবাসে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগও রয়েছে।
এমসি কলেজ ছাত্রলীগসহ ছাত্রাবাসের তিনজন আবাসিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সময় সবচেয়ে বেশি দাপট দেখিয়েছেন ধর্ষণ মামলায় নাম আসা তরুণেরা।
অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ছাত্রাবাস দখলে রাখা ও জুয়ার আসর বসানোর কোনো অভিযোগ পায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রাবাসে সিট না থাকলেও মাঝেমধ্যে গিয়ে কিছু বহিরাগত থাকত, এমন তথ্য পেতাম। এটা শুনে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপও নিয়েছি। তবে করোনার পুরো সময় এভাবে দখল করে থাকা ও নানা রকম দুর্বৃত্তপনার খবর প্রথম শুনলাম।’ তিনি বলেন, ‘একটি ঘটনা যেহেতু ঘটে গেছে, তাই এর সূত্র ধরে অন্য কোনো অপরাধ থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বের করুক, শাস্তির আওতায় আনুক। এটাই আমার দাবি।’
অবশ্য কলেজের ছাত্রাবাসে কারা থাকে, সেটা কলেজ কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেন শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী।
সিলেটে তিন বছর ধরে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এমসি কলেজে কমিটি করা যায়নি ১৭ বছরে। ওই কলেজে বারবার অপকর্মের নানা ঘটনা ঘটছে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ বারবার কেনো অপরাধের জন্য শিরোনাম হচ্ছে, কারা এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গনের আলোকিত ধারাকে কালিমা লেপন করছে, তা খোঁজা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির নামে কী হচ্ছে, তা নিয়েও ভাবতে হবে। তা না হলে অপরাধের মূলোৎপাটন হবে না বলে মন্তব্য করেন সরকারি দলের এই নেতা।