নারায়ণগঞ্জে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, এমন দাবি করে টিআইবি বলছে, এ ঘটনায় অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা অগ্রহণযোগ্য।
আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতির ঘটনা ঘৃণিত অপরাধ। এ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই নিয়োগে কোনো অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়েছিল কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। জালিয়াতির দায় অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত প্রমাণের চেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুই বছর আগের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে জেলা কোটায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং পুলিশ ভ্যারিফিকেশন রিপোর্টে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে; যা ২০২০ সালে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এক তদন্তে উঠে এসেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই তদন্ত রিপোর্টের তথ্যে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের অন্তত ১৮ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিল করে চাকরিতে নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, চাকরিতে স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণপত্র হিসেবে ৫ জন একই নিবন্ধন নম্বরের জমির দলিল প্রদান করেছেন। অন্তত ১১ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৩ দিন পর একই তারিখে, হুবহু একই মৌজা, দাগ ও খতিয়ানে একই সিএস, এসএ ও আরএস নম্বরে নিবন্ধিত জমির দলিল জমা দিয়েছেন; যা আদতে অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য। অথচ যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন বা গোপন করে ইতিবাচক রিপোর্ট প্রদান করেছেন; যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয় বলেই ধারণা করা যায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দায়িত্বে থাকা অন্তত দুজন উপপরিদর্শক তৎকালীন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালেও তিনি ‘মানবিক দিক’ বিবেচনায় ইতিবাচক রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশের চাকরিতে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিলের পরও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়োগের কোনো নৈতিক বা আইনগত ভিত্তি ও সুযোগ নেই। তাই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার কী উদ্দেশ্যে এমন নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন, অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে তার সুরাহা হওয়া দরকার।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির কথা শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা স্বীকার করা হয় না। তাই নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনা ‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র’—এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব হবে না।
টিআইবি জানায়, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ‘কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ মর্মে ১৪ সেপ্টেম্বর যে অঙ্গীকার করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।