ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের নাম উঠেছে।
আজ শুক্রবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটের রেড নোটিশের তালিকায় গিয়ে রবিউলের নাম দেখা যায়। এতে তাঁর ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, বয়স, জাতীয়তা ও অভিযোগের তথ্য রয়েছে।
রেড নোটিশে রবিউলের জাতীয়তা হিসেবে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশি’। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে লেখা আছে ‘হত্যা’। বাংলাদেশের অনুরোধে এই নোটিশ জারি করা হয়েছে।
ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় এখন রবিউলসহ মোট ৬৩ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। বাংলাদেশ অংশের তালিকায় তাঁর নামটিই সবশেষ যুক্ত হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল। তিনি আরাভ খান নাম নিয়ে ভারতীয় পাসপোর্টে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাইয়ে তিনি স্বর্ণের ব্যবসা করেন।
দুবাইয়ে আরাভ নজরদারিতে আছেন বলে গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন মামুন। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেওয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট দিয়েই তিনি পাড়ি জমান দুবাইয়ে। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ১৫ মার্চ দুবাইয়ে তাঁর মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করতে যান বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা। এই প্রেক্ষাপটে তিনি আলোচনায় আসেন।
গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, আরাভ খানের (রবিউল) বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিটি ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো—ইন্টারপোল। সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ ও অপরাধ-বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করে এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ধরতে সহায়তা করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশের মাধ্যমে কোনো দেশের অপরাধীর ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে রেড নোটিশ কোনো আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এক দেশের অপরাধী অন্য দেশে পালিয়ে গেলে সদস্যরাষ্ট্রগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। ইন্টারপোল কাউকে গ্রেপ্তার করে না। ইন্টারপোল এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশকে অনুরোধ জানায়, তারা যেন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে। তখন ওই দেশের পুলিশ নিজস্ব আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আর বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলে অপরাধীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি সহজ হয়।
রেড নোটিশ জারি হলেও দুবাই থেকে রবিউলকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া সহজ হবে না বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও রবিউল ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এদিকে তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে বাংলাদেশ।