হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের আট বছর হলো আজ। এই হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের স্মরণে পুরোনো গুলশান থানার সামনে নির্মিত ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘অনেকে মনে করেছিল এই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আরও জঙ্গি হামলায় বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলেও অনেকে মনে করেছিল। তবে দেশে এখন জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
শ্রদ্ধা জানানো শেষে কথা বলেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না । তিনি আরও বলেন, ‘তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।’
আট বছর আগে ২০১৬ সালের এই দিনে জঙ্গিরা অস্ত্রের মুখে বেকারিতে থাকা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের প্রথমে জিম্মি করে। সেই রাতে জিম্মিদের উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, নৌ কমান্ডো ও সেনাবাহিনী যুক্ত হয়। সেই রাতে জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে মোট ২২ জনকে হত্যা করে। এর মধ্যে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা একটি ভুল মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে। ফলে এটি দমন করতে অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন এবং এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই মতাদর্শ এখনো রয়েছে।
তাই তারা অনলাইনে ও বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য, গবেষণা ও ক্ষেত্রবিশেষে অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘হোলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর থেকে জঙ্গিরা ছোট কিংবা বড় কোনো হামলাই করতে পারেনি। বরং জঙ্গিরা যেখানে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে, আমরা সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে আগেই অভিযান পরিচালনা করি। ফলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, যা এখনো আছে।’
এদিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা জঙ্গিদের বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে নজরদারি করছি। গত সপ্তাহেও চট্টগ্রাম থেকে তিনজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা একসময় নানা প্রচারণা ও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। জঙ্গিরা একসময় ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেছে। আমরা এসব বিষয়ে নজরদারি করছি। ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডেও আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমরা মানুষজনকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না।’
শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতা পুলিশের বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে সরকার ও পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, সচেতন শ্রেণির মানুষ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কীভাবে চলছে, কার সঙ্গে চলছে, কতক্ষণ তার সন্তান মোবাইলে থাকছে, একা একা থাকছে, কার সঙ্গে থাকছে।
জঙ্গিদের অর্থায়নে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্সের জড়িত থাকার অভিযোগের প্রশ্নে হাবিবুর রহমান বলেন, জঙ্গিসংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের পেছনে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।