পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ১৩০ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি জমির মূল মালিকদের পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে হুমকি এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ এসেছে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন জমির মালিক কটিয়াদীর মৃত নূরুল আমিনের পরিবার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নূরুল আমিনের স্ত্রী হাসনা আমিন, বড় ছেলে বদরুল আমিন, ছোট ছেলে সিরাজুল আমিন ও ভাই রুহুল আমিন। যদিও নূর মোহাম্মদ দাবি করেছেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা। জমিটির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।
বদরুল আমিন বলেন, তাঁর বাবা নূরুল আমিনের প্রায় ১৩০ একর জমি সাবেক আইজিপি ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ক্ষমতায় থাকার সময় প্রভাব খাটিয়ে দখলে নেন। নূর মোহাম্মদের ভাগিনা মুন ও শাওনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ২০০৮ সালে জমিটি জোর করে দখলে নেয়। তাদের সাহায্য করেছে পুলিশ বাহিনী। অথচ জমির মালিকানার কোনো প্রমাণাদি তাঁর (নূর মোহাম্মদ) কাছে নেই। পরে জমিটি উদ্ধারে নূরুল আমিন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে নূর মোহাম্মদ প্রভাব খাটান এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।
নূর মোহাম্মদ তাঁর বাবাকে লালমাটিয়ার ভাড়া বাসা থেকে একাধিকবার তুলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বলে দাবি করেন বদরুল আমিন। তিনি বলেন, ‘এই নির্যাতন ও হুমকির মাত্রা এমন ছিল যে জীবন রক্ষার্থে আমার বাবাকে একপর্যায়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এমন ঘটনা অন্তত চারবার ঘটেছে। দেশে ফিরলেই তাঁর ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ত। ফলে ২০১০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০১১ সালে নূর মোহাম্মদ আইজিপির পদ থেকে অবসরে গেলে তাঁর বাবা আবার দেশে ফিরে আসেন।
বদরুল আমিন আরও অভিযোগ করেন, বর্তমানেও তাঁদের জমি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের দখলে রয়েছে। জমিতে ২০১৬ সালে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিলেও সেটি তোয়াক্কা করেননি নূর মোহাম্মদ। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে তিনি প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু ও গাছ বিক্রি করেছেন।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের ভয়ে ঠিকভাবে বাড়িতেও যেতে পারেন না বলে অভিযোগ করেন বদরুল আমিন। তিনি বলেন, বাড়িতে গেলেই তাঁদের নামে মামলা দেওয়া হতো। জমিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা হয়, গুলি চালায়। সে ঘটনায় অনেকে আহত হন। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সালিস ডাকা হলেও সাবেক আইজিপি আসতেন না। ২০১৮ সালে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর নূর মোহাম্মদ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, কারণ তখন তিনি সংসদ সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে নূরুল আমিনের ভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এমন কোনো মাস নেই, যেই মাসে কোনো না কোনো মামলায় আমাদের আদালতে হাজিরা দিতে হয় না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, জমিটি আমার বাড়ির সামনে। এই জমির বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন নূরুল আমিন। খেলাপি হলে জমিটি ‘অকশন’ হয়। তখন আরেকটি পক্ষকে জমিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বদরুল আমিনের বাবাকে কিছু টাকাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, এই জমির সঙ্গে তাঁর আর্থিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলা ও হয়রানির অভিযোগুলোও মিথ্যা।
নূরুল আমিনের ছেলে বদরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, নূর মোহাম্মদ এই জমির ‘অকশনের’ কথা বললেও এর সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না। তিনি কাগজে–কলমে এখানে তাঁর নামে কিছু রাখেননি। কিন্তু তাঁর ভাগনে মুন ও শাওনকে দিয়ে পুরো জমিটি নিয়ন্ত্রণ করেন।’