হিরো আলমের ওপর হামলাকারীরা সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত
ঢাকা-১৭ আসনে ভোট চলাকালে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে দুজনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
ভোট গ্রহণ চলাকালে গত সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। সেখানে তাঁকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়।
হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সুজন রহমান ওরফে শুভ বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে হিরো আলমের গতিরোধ করে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে।
মারধরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার রাতে চারজন ও গতকাল তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আটক সাতজনকে হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তাঁদের প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত ছানোয়ার কাজী (২৮) ও বিপ্লব হোসেনকে (৩১) তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি পাঁচ আসামি মাহমুদুল হাসান ওরফে মেহেদী (২৭), মোজাহিদ খান (২৭), আশিক সরকার (২৪), হৃদয় শেখ (২৪) ও সোহেল মোল্লাকে (২৫) কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার বাদী সুজন রহমান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীদের নাম জানেন না। তাই তাঁদের মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পুলিশের কাছে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দিয়েছেন। এখন হামলায় যাঁরা জড়িত, পুলিশ তাঁদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র ও বনানীর কড়াইল এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আশিক সরকার ঢাকা মহানগর উত্তর ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও মাহমুদুল হাসান বনানী থানা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। বিপ্লব হোসেন বনানী থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় শেখ ছাত্রলীগ নেতা আশিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মোজাহিদ খান, ছানোয়ার কাজী ও সোহেল মোল্লা দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেন।
আশিক বনানীতে কড়াইলের মোশারফ বাজার বস্তিতে থাকেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার হোমনার পাতালিয়া কান্দিতে। মাহমদুল হাসান বনানীতে থাকেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বর্ণী গ্রামে। বিপ্লব হোসেন মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ৩ নম্বর লেনের বাউনিয়াবাদে থাকেন। ছানোয়ার কাজী মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে থাকেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গোয়ালগ্রামে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দিন শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও শেষবেলায় ভেজাল করা হয়েছে। এটার দায়দায়িত্ব আমরা নেব না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আমাদের আপত্তি নেই।’ তিনি দাবি করেন, হামলায় যুবদল নেতার নামও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জড়িতরা যে রাজনৈতিক দলের হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে দেখছি। এক দলের ব্যাজ ধারণ করা লোকজনের মধ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষ ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করছি।’
হিরো আলম সোমবার ভোট গ্রহণ চলাকালে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে যান। এ সময় নৌকা প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকেরা পেছন থেকে তাঁকে গালাগাল করতে থাকেন এবং কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে রেখে স্কুলের ফটকের দিকে নিয়ে যান। বাইরে যাওয়ার পর তাঁকে নৌকার ব্যাজধারীরা মারধর করেন।
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনাকে গতকাল ‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। এ ঘটনায় গতকাল উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। এর আগে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে।