মিরপুরে সহপাঠীর বাসা থেকে জুবায়েরের মরদেহ উদ্ধার
শ্রেণিকক্ষে এক সহপাঠীকে মারধর করছিল রাজিন ইকবাল (সানি)। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে এগিয়ে যায় জুবায়ের হাসান রাফিত। বাধা দেয় রাজিনকে। এতে ক্ষেপে জুবায়েরকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় রাজিন। এরপর জুবায়ের বিষয়টি শিক্ষকদের জানালে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজিন ও তাঁর বাবা ইকবাল চৌধুরীকে ডেকে সতর্ক করেন। এক মাস আগে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল শনিবার এই কলেজের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের তৃতীয় তলায় রাজিনের বাসা থেকে জুবায়েরের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে রাজিন ও তার বাবা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
জুবায়েরের মামা মো. নুরুজ্জামানের অভিযোগ, কলেজের সেই ঘটনার জেরে রাজিন তাঁর ভাগনেকে শনিবার বাসায় ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে কলেজে পড়ত জুবায়ের। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের পাশে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মামা নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জুবায়েরের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে। কিন্তু খুনিরা সব শেষ করে দিয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, জুবায়ের শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে কোচিংয়ে গিয়েছিল। বেলা ৩টার দিকে তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় তিনি খোঁজাখুঁজি করেন। পরে সন্ধ্যায় কলেজের এক শিক্ষক ফোন করে তাঁকে জানান, জুবায়েরকে হত্যা করা হয়েছে। কমার্স কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারের তৃতীয় তলায় তাঁর ভাগনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে।
জুবায়েরের বাবার নাম আবুল বাসার বাদশা। তিনি আড়াইহাজার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুবায়ের ছিল সবার বড়।
নুরুজ্জামানের দাবি, এক বন্ধুকে নিয়ে কলেজের কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে জুবায়েরের ঝগড়া হয়েছিল। জুবায়ের ক্লাসের ক্যাপ্টেন ছিল। তাঁর ভাগনে বিষয়টি শিক্ষকদের জানানোর কারণে রাজিন ক্ষিপ্ত হয়। পরে জুবায়েরকে পায়ে ছুরিকাঘাত করে আহত করে রাজিন। কিন্তু ভয়ে বিষয়টি তাঁকে বলেনি জুবায়ের। গতকাল যখন বাসায় ডেকে নেয়, তখন রাজিনের বাবা ইকবাল বাসায় ছিলেন। রাজিনের সঙ্গে তার বাবাও এই খুনের সঙ্গে জড়িত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই সহপাঠীর ঝগড়ার জেরে রাজিন জুবায়েরকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি বলেন, যেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাসায় রাজিন ও তার বাবা ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক।
মিরপুর কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে মারামারির কোনো ঘটনা তাঁর জানা নেই। জুবায়ের হত্যার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে কী কারণে কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটা তিনি এখনো নিশ্চিত নন।
শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার থানায় এসেছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।