সাবেক সেনাপ্রধানের দুই ভাই: স্বামীদের মতো তাঁরাও মিথ্যা তথ্যে ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন

একজনের স্ত্রীর পাসপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাতিল। ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বজন হওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্বামীদের মতো ভুয়া তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন হারিছ আহমেদের স্ত্রী দিলারা হাসান ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের স্ত্রী শামীম আরা খান। এই দুজন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ভাই।

দিলারা হাসান তাঁর ই-পাসপোর্টে স্বামীর নাম লিখেছেন মোহাম্মদ হাসান। বাস্তবে স্বামীর নাম হারিছ আহমেদ। আর শামীম আরা খান স্বামীর নাম লিখেছেন তানভীর আহমেদ তানজীল। কিন্তু স্বামীর প্রকৃত নাম তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ।

আদালতের কাগজপত্রে অবশ্য প্রকৃত নাম আছে। তাঁরা দুজনই পেয়েছেন ১০ বছর মেয়াদের ই-পাসপোর্ট। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বজন হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

হারিছ ও তোফায়েল ওরফে জোসেফ নিজেদের নাম, মা-বাবার নামের মতো স্ত্রীদের পাসপোর্টে নিজেদের নাম পাল্টাতে আজিজ আহমেদের সহযোগিতা নিয়েছেন। হারিসের স্ত্রী দিলারা হাসানের বাবার নাম হাবীবুর রহমান, মাতা ফাতেমা বেগম। তিনি বাসার ঠিকানা দিয়েছেন আর-২৮ নুরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা ১২০৭। জরুরি যোগাযোগের জন্য একই ঠিকানায় তাঁর বোন বাবলি রহমানের নাম ও মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে। তবে সেই মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

দিলারা হাসানের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। একই নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এমআরপি পাসপোর্ট নিয়েছিলেন তিনি।

তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীয় সিস্টেমের তথ্যভান্ডারে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর দিলারা হাসানের পাসপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা রয়েছে।

আরও পড়ুন

তোফায়েল ওরফে জোসেফের স্ত্রী শামীম আরা খানের বাবার নাম শাহীন খান ও মা শাহিদা বেগম। তিনি বাসার ঠিকানা দিয়েছেন ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তিনি জরুরি ঠিকানায় স্বামীর নাম ও মুঠোফোন নম্বর দিয়েছেন। জোসেফের স্ত্রী ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২০৩০ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত পাসপোর্ট পেয়েছেন। একই নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এমআরপি পাসপোর্ট নিয়েছিলেন।

একইভাবে হারিছ ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ হাসান নামে ঢাকার আগারগাঁও অফিস থেকে প্রথম পাসপোর্ট করান। তাতে জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা দেওয়া হয় ফাতেমা বেগম, আর-২৮ নুরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর। ২০১৭ সালে তিনি ভিয়েনা থেকে আবেদন করে আবার পাসপোর্ট নেন। ২০১৯ সালে তিনি পাসপোর্টে নিজের ছবি বদল করেন। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর নামে ১০ বছর মেয়াদি একটি ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন

একই সূত্র জানায়, জোসেফ প্রথম পাসপোর্ট নেন ২০১৮ সালের ১৩ মে, তানভীর আহমেদ তানজীল নামে। তাতে স্থায়ী ঠিকানা ছিল ১২৩/এ তেজকুনীপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। আর বর্তমান ঠিকানা ছিল ৪০ খানপুর, নারায়ণগঞ্জ। বৈবাহিক অবস্থা-অবিবাহিত। ওই বছরেরই ৪ জুন স্ত্রীর নাম যুক্ত করে তিনি পাসপোর্ট সংশোধন করান। ২০১৯ সালে পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা বদল করেন। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তিনি ই-পাসপোর্ট নেন। এ সময় নিজের ছবি, স্থায়ী ঠিকানা ও জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা পরিবর্তন করেন।

আরও পড়ুন

বহুল আলোচিত তিন সহোদরের দুজন হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল ওরফে জোসেফ। নিজেদের ছবি দিয়ে নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করার সময় ব্যক্তিকে সশরীর হাজির থেকে ছবি তুলতে হয়।

ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দেওয়া পাসপোর্ট অধ্যাদেশ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। পাসপোর্ট অধ্যাদেশের ১১ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা সঠিক তথ্য লুকিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট নিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা।