বছরে চাঁদাবাজি ৪ কোটি টাকা, ভাগ ‘সবার’ পকেটে

চাঁদাবাজি
প্রতীকী ছবি

ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে বসা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের (হকার) কাছ থেকে মাসে প্রায় ৩২ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। বছর হিসাবে এটির পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। চাঁদার এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী ও চাঁদা আদাকারীদের (লাইনম্যান) সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, ব্যবসার ধরনভেদে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরসংলগ্ন প্রায় ৭৩০টি দোকান থেকে দৈনিক ৮০ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হয়। কিছু দোকানের মালিককে দিতে হয় ২৫০ টাকা।

অন্যদিকে মিরপুর-১০ নম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্ট্রিট ভেন্ডর’ কার্যক্রম চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ফুটপাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে চালু করা এ কর্মসূচি এখন হকারদের জন্য ‘হিতে বিপরীত’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদার পাশাপাশি এখন ‘হকার অ্যাপের’ নামে দিতে হচ্ছে বাড়তি আরও ২০ টাকা।

একজন হকার বলেন, পেটের দায়ে ব্যবসা করি। দোকান করতে হলে টাকা দিতেই হবে। নইলে ব্যবসা বন্ধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কাজীপাড়া, মিরপুর-২, মিরপুর–১২ কিংবা মিরপুর–১৪ নম্বর—সব দিকের ফুটপাতেই দোকান রয়েছে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের। দোকানের কারণে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলার জো নেই। কোথাও পুরো ফুটপাতই দখল হয়ে গেছে। পথচারীরা চলছেন মূল সড়কে নেমে।

চাঁদাবাজি ৩০ লাখ টাকা

ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও লাইনম্যানরা বলছেন, মিরপুর-১০ নম্বরে যেতে বেগম রোকেয়া সরণির সেনপাড়া অংশ থেকে চৌরঙ্গী মার্কেট পর্যন্ত ফুটপাতে প্রায় ২৩টি দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। চৌরঙ্গী মার্কেট থেকে বড়বাগের দিকে যাওয়ার রাস্তা (বাউন্ডারি সড়ক) ও ফুটপাতে রয়েছে প্রায় ৫৩টি দোকান। সেখানে ডাব, ফল, সেদ্ধ ডিম ও ভ্যানগাড়ির প্রায় সাতটি দোকান থেকে ৮০ টাকা এবং ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, চা-সিগারেট ও জুস বিক্রির প্রায় ৪৬টি দোকান থেকে ১৩০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। ওই অংশে মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়।

চৌরঙ্গী মার্কেটের পরে দেওয়ান ও আনোয়ার ম্যানশন হয়ে পদচারী–সেতুর সিঁড়ির নিচে পর্যন্ত ছোট–বড় প্রায় ৪৮টি দোকান আছে, যা ফলপট্টি হিসেবে পরিচিত। এর পরে পদচারী–সেতুর সিঁড়ির নিচে হাতঘড়ি, বেল্ট, সিগারেট, ফুল ও খবরের কাগজ বিক্রির ২৬টির মতো দোকানে রয়েছে। ওই অংশে দৈনিক ২৫০ টাকা হিসাবে মাসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

মিরপুর-২ নম্বরের দিকে যেতে (দক্ষিণ পাশে) সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সামনে থেকে সুলতানস ডাইন পর্যন্ত রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবিসহ নানা পোশাক বিক্রির প্রায় ১২০টি দোকান। এসব দোকান থেকে দিনে ২০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। এ হিসাবে মাসে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।

মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সামনে বসে ১২৭টির মতো দোকান। মিরপুর-১৪ নম্বরের দিকে গার্লস আইডিয়াল স্কুলের সামনে পর্যন্ত উত্তর পাশের ফুটপাতে প্রায় ১৬০টি দোকান ও দক্ষিণ পাশে (শাহ্‌ আলী মার্কেট থেকে আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়) অংশে রয়েছে আরও প্রায় ৯৫টি দোকান। ওই তিন জায়গার পৌনে চার শর বেশি দোকান থেকে দৈনিক ১৩০ টাকা করে ৫০ হাজার ও মাসে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।

‘অ্যাপের’ নামে আরও ২ লাখ

মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্ট্রিট ভেন্ডর’ কার্যক্রম চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর আওতায় হকারদের জাতীয় পরিচয়পত্র, মুঠোফোন নম্বর, ছবি ও ব্যবসার ধরনের একটি তালিকা করে তা অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ। অ্যাপের তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন কাউন্সিলরেরই ঘনিষ্ঠ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিখন রায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, যাঁরা ১৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ব্যবসা করেন, তাঁদের কাছ থেকে ‘হকার অ্যাপের’ নামে দৈনিক ২০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। তবে অন্য ওয়ার্ড এলাকার ফুটপাতে বসা হকারদের সপ্তাহে একবার করে এ টাকা দিতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদের ওয়ার্ডে রয়েছে প্রায় ২৭০টি দোকান। সে হিসাবে দৈনিক ৫ হাজার ৪০০ টাকা ও মাসে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর ঢাকা উত্তর সিটির ৩ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ফুটপাতে রয়েছে প্রায় ৩৮২টি দোকান। সেখান থেকে সপ্তাহে ২০ টাকা হিসাবে মাসে ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

চাঁদাবাজির ‘মূল হোতা’

হকার ও লাইনম্যানদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজি চক্রের মূলে রয়েছেন আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতা। তাঁদের মধ্যে প্রধান হচ্ছেন ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মহানগর উত্তর আওয়ামী হকার্স লীগের সহসভাপতি জাফর গাজী। লাইনম্যানরা তাঁর কাছেই চাঁদার টাকা জমা দেন।

বাকি দুজন হচ্ছেন ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ওরফে ফুট আখের ও একই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হানিফ ওরফে ফালান। সন্ত্রাসী বাহিনী ও কিশোর গ্যাং দিয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়া এবং ভয় দেখিয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য করাই তাঁদের কাজ।

এ তিনজনের সঙ্গে যুক্ত আছেন মিজানুর রহমান (মিজান) নামের আরেক ব্যক্তি। হকারদের কাছে তিনি মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সহকারী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। চাঁদার টাকায় পুলিশ যে ভাগ পায়, তা মিজানের কাছে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও লাইনম্যানেরা।

লাইনম্যান যাঁরা

বাউন্ডারি সড়কে চাঁদা তোলেন মো. হাসান। তিনি জাফর গাজীর আপন ভাতিজা। চৌরঙ্গী মার্কেটের সামনে তাঁর একটি ফল বিক্রির দোকান আছে। ফলপট্টি অংশে চাঁদা তোলেন হেলাল ও মনির নামের দুজন। পদচারী–সেতুর নিচে হেলালের খবরের কাগজ বিক্রির দোকান। ফলপট্টিতে দোকান আছে মনিরের।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে সুলতানস ডাইনের সামনের ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের কয়েকজন প্রতিনিধি চাঁদা তোলেন। একসঙ্গে ১০-১৫টি দোকান থেকে চাঁদা তোলেন ফুটপাতেরই একজন হকার। তাঁদের কয়েকজন হচ্ছেন প্যান্ট বিক্রেতা পান্ডা আলমগীর, শার্ট বিক্রেতা জুয়েল (মিজানের শ্যালক) ও আরেক শার্ট বিক্রেতা সাঈদ। তাঁরা চাঁদার টাকা একত্র করে জাফরের বড় ভাই মুসার কাছে দেন। পদচারী–সেতুর নিচে মুসার ফুল বিক্রির দোকান আছে।

কার পকেটে কত

হকাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করতে চাঁদা দেওয়া লাগে। তবে কে কত পায়, সেটা তাঁদের জানা নেই। একজন হকার বলেন, ‘পেটের দায়ে ব্যবসা করি। দোকান করতে হলে টাকা দিতেই হবে। নইলে ব্যবসা বন্ধ।’ চাঁদার ভাগ কে কত টাকা পায়, তা শুধু জাফর, আখের ও ফালান—এ তিনজন জানেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে আগে লাইনম্যান ছিলেন এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, মিরপুর–১০ গোলচত্বরকেন্দ্রিক পাঁচটি ফুটপাতের অংশে চাঁদাবাজি চলে। সেখান থেকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদকে আগে মাসে ১ লাখ টাকা দেওয়া হতো। ওই টাকা মুরসালিন নামের একজন লাইনম্যান খামে ভরে কাউন্সিলর কার্যালয়ে দিয়ে আসতেন। এখন প্রতি মাসে কম করে হলেও দেড় লাখ টাকা দিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি আরও বলেন, পুলিশের টাকা নিতেন মিজানুর রহমান। প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা মিরপুর থানার সামনে গিয়ে মিজানের কাছে দিয়ে আসা লাগত। অন্যান্য লাইনম্যানের কাছ থেকে আরও প্রায় আড়াই লাখ টাকা পুলিশের জন্য মিজানের কাছে দেওয়া লাগত। ব্যবসায়ীদের নানান ঝামেলায় থানা-পুলিশকে পাশে রাখতেই এই টাকা দেওয়া হতো। এ ছাড়া গোলচত্বরে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার ২০০ টাকা ও দিনে দুই বেলায় থানা-পুলিশের টহল গাড়িতে ৭০০ করে মোট ১ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া লাগত। আর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের হাতে রাখতে শফিকুল ইসলাম ও এম এ হানিফ ফুটপাতের সব অংশ মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিতেন। ফুটপাতে নতুন ব্যবসায়ী বসানো কিংবা একজনের জায়গায় অন্য ব্যবসায়ী বসা নিয়ে তৈরি ঝামেলাগুলো থানা-পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা সমাধান করতেন।

'চাঁদাবাজেরা' যা বলছেন

লাইনম্যান মনিরের দাবি, তিনি আর চাঁদা তোলেন না। মাস তিন আগে তাঁকেসহ জাফরের ভাই মুসাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ওই পথে যাবেন বলে ৮ দিন ফুটপাতে ব্যবসা বন্ধ ছিল। তখন অন্য অংশের ফুটপাতে বাড়তি টাকা নিয়ে তাঁরা কিছু দোকান বসিয়েছিলেন। ওই টাকা তাঁরা জাফরকে না দিয়ে দুজন ভাগ করে নিয়েছিলেন। জাফর সেটি জানতে পেরে তাঁদের চাঁদা তোলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, জাফরের ভাতিজা হাসান এখন ফুটপাতে চাঁদা তোলেন। আর মুসার জায়গায় হেলালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনি যেহেতু জানেন আমি চাঁদা তুলি, তাহলে এটাও জানেন যে এ টাকা আমি পাই নাকি কে পায়?’ কে পায় জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি টাকা জমা দিই জাফরের কাছে।’

মহানগর উত্তর আওয়ামী হকার্স লীগের সহসভাপতি জাফর গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা বলছে, তারা মিথ্যা বলতেছে। আপনি যা খুশি লিখতে পারেন।’ মুসা ও হাসানকেও তিনি চেনেন না বলে দাবি করেন। বক্তব্য জানতে শফিকুল ইসলাম ও এম এ হানিফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি।

আর পুলিশের চাঁদার ভাগ নেওয়ার বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা যদি কেউ বলে থাকে, তাহলে ভুল বলেছে। আমি এদের কাউকে চিনিও না। ফুটপাতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

কাউন্সিলরের ভাষ্য

চাঁদার ভাগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৮ বছর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্বে থেকে কখনো ফুটপাতে যাইনি। ফুটপাতকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনতে যখন মেয়র দায়িত্ব দিলেন, তখনই পরীক্ষামূলক স্ট্রিট ভেন্ডরের কার্যক্রম শুরু করেছি।’ তাঁর ভাষ্যমতে, স্ট্রিট ভেন্ডর কার্যক্রমকে নষ্ট করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কারণ, হকাররা এই কার্যক্রমের আওতায় এলে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে।

কাউন্সিলরের দাবি, লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা, যাঁরা কাজগুলো (চাঁদাবাজি) করছেন, তাঁরা খেপে যাবেন। জাফর, আখের ও ফালান—এঁরাই চাঁদাবাজি করেন। তবে তাঁরা শুধু সামনের অংশে রয়েছেন। পেছনে অনেক প্রভাবশালী রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে স্ট্রিট ভেন্ডর কর্মসূচি ভেস্তে যাবে। হকার অ্যাপের নামে দৈনিক ২০ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি।

‘আমি ওসি দাঁড়িয়ে থেকে দোকান তুলে দেব’

পুলিশের চাঁদার ভাগ পাওয়ার বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একটু জানতে হবে। ১০ নম্বর তো দুটি থানার আওতাধীন। এর মধ্যে কাফরুল থানাও আছে। আর আমি যত দূর জানি লোকাল (স্থানীয়) কাউন্সিলর বিদ্যুতের লাইন দিয়ে বোধ হয় এটা মেইনটেইন (তত্ত্বাবধান) করে। থানার কেউ এ রকম (চাঁদা) নেয়, সেটা আমার নলেজে (জানা) নেই। খবর নিই, তারপর জানাতে পারব। টাকাপয়সা নেওয়ার কোনো খবর আমার জানা নেই।’

ওসি মোহাম্মদ মহসীনের হোয়াটসঅ্যাপে মিজানুর রহমানের ছবি পাঠানো হলে তিনি তাঁকে চেনেন বলে জানান। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মিজান থানায় চা–নাশতা আনা–নেওয়ার কাজ করেন। তিনি চাঁদার টাকা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত কি না, তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন।

লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পুলিশ খেপে যাবে—ওয়ার্ড কাউন্সিলরের এমন বক্তব্য জানানো হলে ওসি বলেন, ‘কেন পুলিশ খেপবে, খেপার কী আছে? কখন এগুলো (ফুটপাতের দোকান) বন্ধ করতে চায়, কখন তুলতে চায়, আমি ওসি দাঁড়িয়ে থেকে তুলে দেব। যদি সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নেয় রাস্তায় হকার থাকবে না, মিরপুর মডেল থানার ওসি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সহযোগিতা করবে।’