আরাভকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগে ভাটা যে কারণে
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দুবাই থেকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগ্রহ নেই সরকারের।
সরকরের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, আরাভকে এখন দেশে ফেরানো হলে জটিলতা বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কায় তাঁর ব্যাপারে সরকার আপাতত চুপচাপ আছে।
কী ধরনের জটিলতা হতে পারে, এমন প্রশ্নে সূত্রটি প্রথম আলোকে বলে, এখন আরাভকে দেশে ফেরানো হলে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম বললে নির্বাচনের আগে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকার এখন এগোতে চাইছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, আরাভকে সরকার ফেরাতে চাইলেও বিষয়টি অত সহজ হবে না। কেননা, আরাভ জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও তিনি এখন ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। ভারতীয় পাসপোর্টে তাঁর নাম ‘আরাভ খান’। অন্যদিকে, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর নাম ‘রবিউল ইসলাম’। এসব কারণে দুবাইয়ের কর্তৃপক্ষ কোনো কারণে আরাভকে আটক করলেও তাঁকে সরাসরি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে না।
আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটে। একটি ঘটনায় কাজ করতে গিয়ে আরেকটি ঘটনা হারিয়ে যায়। তবে আমি খোঁজ নেব, কেন এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আরাভের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারির পর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি জানতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে ভারত সাহায্য না করলে তাঁকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি কঠিন হবে।
আরাভ দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের একটি সোনার দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে আরাভ আলোচনায় আসেন। এরপর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা জানানো হয়।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়।
মামুন খুনের ঘটনায় তাঁর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেন। হত্যা মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মামলাটি এখন ঢাকার আদালতে বিচারাধীন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মামুন খুনের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। পরে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পাড়ি জমান। এখন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন তিনি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, আরাভকে ফেরাতে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের তরফ থেকে এখন তেমন আগ্রহ নেই। তাই তারা এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি বন্ধ করে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই বিষয়ে আর কোনো যোগাযোগ হবে না বলেই তারা মনে করছে।
রবিউল ওরফে আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কী হবে, এ বিষয়ে গত মার্চ মাসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমাদের আগে বুঝতে হবে, দুবাই সরকারের অ্যাটিটিউড (মনোভাব) কী। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরানো যেতে পারে। কথাবার্তা চলছে, দেখি কী হয়।’
রবিউলকে (আরাভ) দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত মার্চ মাসে তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অনুরোধে একই মাসে রবিউলের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করে ইন্টারপোল।
গত ৯ মে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ অস্ত্র মামলায় রবিউলকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রবিউল। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করে।
একই বছরের ১০ মে মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। সে বছরের ২৪ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন রবিউল। তবে আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁর জামিন বাতিল হয়। এই মামলায় পলাতক আসামি হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণা করেন আদালত।