কলকাতার যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে কয়েকটি মাংসের টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেগুলো আনোয়ারুল আজীমের মরদেহের খণ্ডিত অংশ কি না, তা এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন এসব মাংসের টুকরার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে ঢাকা ও কলকাতায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, আনোয়ারুল আজীম ১২ মে কলকাতায় যাওয়ার পরদিন ফাঁদে ফেলে তাঁকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে হত্যা করা হয়। আলামত মুছে ফেলার জন্য তাঁর দেহ টুকরা টুকরা করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে। তদন্তের জন্য বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
আজ মঙ্গলবার কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটের পয়োনিষ্কাশন নালা ধরে সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালানো হয়। পরে রাতে ডিবি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাড়ির সুয়ারেজ লাইন ধরে তল্লাশি চালিয়েছি। পরে সেপটিক ট্যাংকে অনেকগুলো মাংসের টুকরা পেয়েছি।’
কলকাতায় অবস্থানরত ঢাকা ডিবির কর্মকর্তারা সকালে সেখানকার পুলিশকে সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তল্লাশির অনুরোধ জানান। পরে কলকাতা পুলিশ ওই ব্যবস্থা করে।
ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আনোয়ারুল খুনের ঘটনায় ঢাকার মামলায় গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে লাশ খণ্ড খণ্ড করার বিষয়টি এসেছে। লাশের মাংসের কিছু অংশ বাথরুমের কমোডে ফ্ল্যাশ করে দেওয়ার কথা জানান আসামিরা। এই বর্ণনা অনুযায়ী ধারণা করা যায়, উদ্ধার হওয়া দেহের খণ্ডিত অংশগুলো আনোয়ারুলের হতে পারে।
এর আগে লাশের সন্ধানে গত বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জিরানগাছা বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ। আজও ঢাকার গোয়েন্দা দলের উপস্থিতিতে কলকাতার এ খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তবে সেখানে লাশের কোনো চিহ্নও পাওয়া যায়নি। যেই অস্ত্র দিয়ে আনোয়ারুলের মরদেহ কাটার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোও উদ্ধার হয়নি।
ঢাকার তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজন ও ভারতে গ্রেপ্তার একজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী লাশ পেতে তল্লাশি চালানো হয়। আজ কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রুপের (ডিএমজি) সহায়তায় দেহাংশ খোঁজা হয়। বাগজোলা খালের দুই পাশ থেকে মাছ ধরার জাল ফেলে চলে তল্লাশি অভিযান। খালটি প্রশস্ত হওয়ায় নৌকায় চড়ে জাল ফেলেও খোঁজা হয় লাশ।
ঢাকার ডিবি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। কলকাতা পুলিশের সঙ্গেও আমরা তথ্য বিনিময় করছি। এর মাধ্যমে আশা করছি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’