স্ত্রীকে হত্যার পর ঢাকায় এসে দ্বিতীয় বিয়ে করে ২১ বছর পার
বিয়ের পর শ্বশুরের কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক চেয়েছিলেন মো. আলম। টাকা না পেয়ে স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করেন তিনি। পরে মা–বাবার নাম পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে ২১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন আলম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বংশাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে গতকাল শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, বিয়ের পর শ্বশুরের কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেছিলেন আলম। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হন তাঁর শ্বশুর। টাকা না পেয়ে স্ত্রী আম্বিয়া বেগমের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন আলম। একপর্যায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় আম্বিয়ার শরীরে। পরে চিকিৎসাধীন হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪–এর অধিনায়ক (সিও) উপমহাপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আলম ও আম্বিয়া মানিকগঞ্জের সিংগাইরের একই গ্রামের বাসিন্দা। আম্বিয়াকে বিয়ের তিন মাসের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘটনার পর ২০০১ সালে ঢাকায় চলে আসেন আলম। ঢাকার বংশাল এলাকায় নিজের নাম–ঠিকানা পাল্টে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার টিকাটুলী এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আলম জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম ঠিক রেখে মা–বাবার নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করেন। বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বারবার পেশা পরিবর্তন করেছেন। নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য কাজী আলাউদ্দিন লেন, বংশাল, ঢাকার ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন তিনি।
আম্বিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর বাবা মকবুল হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় মো. আলম, তাঁর বাবা রইস উদ্দিনসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি আলমের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে মানিকগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আম্বিয়াকে হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে আলমকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরবর্তী সময়ে ডেথ রেফারেন্সের জন্য মামলা উচ্চ আদালতে গেলে রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। ২০০৬ সালের ৬ জুন আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় প্রকাশ পায়।