পল্লবীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গৃহবধূর মৃত্যু, সন্ত্রাসী দলের প্রধানসহ ৩ জন গ্রেপ্তার
রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ বস্তিতে গুলিতে আয়েশা আক্তার নামের এক গৃহবধূকে হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত তিন দিনে ঢাকা ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মমিন (৩৫), আল ইসলাম (২৫) ও নাসিরউদ্দিন ২৮। পুলিশের ভাষ্যমতে, মমিন একটি চাঁদাবাজ দলের প্রধান। ওই দিন তাঁর দলের লোকের গুলিতেই আয়েশা আক্তারের মৃত্যু হয়।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে র্যাব-১ ও র্যাব-৪–এর যৌথ দল গাজীপুরের গাছা থানার উত্তরপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মোমিনকে গ্রেপ্তার। এর আগে গত বুধবার রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল ইসলাম ও নাসিরকে গ্রেপ্তার করে।
গত বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ বস্তিতে ২০-৩০ জন যুবক মিলে ধারালো অস্ত্রের মুখে মামুন নামের এক ব্যক্তিকে জিম্মি করে মারধর করছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে দু-তিনজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েকজনের হাতে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় কয়েকজন নারী ও স্থানীয় লোকজন এসে মারধরের শিকার মামুনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গৃহবধূ আয়েশার শরীরে লাগে। এতে তিনি ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।
গত বুধবার রাতে আয়েশা আক্তারের স্বামী মেরাজুল ইসলাম ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জন জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আল ইসলাম ও নাসিরকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আর র্যাবের হাতে আটক প্রধান আসামি মমিনের গুলিতে সেদিন গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিহত হন। আজ শনিবার তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে থাকা আল ইসলাম ও নাসির জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, মারধরের শিকার মামুন মাদক বিক্রেতা। আর হামলাকারী মমিনের নেতৃত্বাধীন দল চাঁদাবাজি করে। বুধবার দুপুরে মমিন বাউনিয়াবাঁধের মাদক বিক্রেতা মামুনের কাছে চাঁদা দাবি করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁরা মামুনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন মামুনের সহযোগীরাও সেখানে জড়ো হন। পাশের দোতলা বাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে ঘটনা দেখছিলেন গৃহবধূ আয়েশা। একপর্যায়ে মমিনের লোকজন প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আয়েশার গলার নিচে লাগে।
আয়েশা সপরিবার বাউনিয়াবাঁধে থাকতেন। তাঁর স্বামী মেরাজুল ইসলাম পেশায় বাসচালক। আজ বিকেলে যোগাযোগ করা হলে মেরাজুল বলেন, তিনি এখন অবুঝ দুই ছেলে (দুই বছর ও পাঁচ বছর) নিয়ে ময়মনসিংহের নান্দাইলের টিপাতালায় আছেন। তাঁর স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। ছোট্ট বাচ্চাটা তার মায়ের জন্য সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বড় ছেলের ঘুম ভেঙে গেলে ওর মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে সে। তখন বলে, চলো মায়ের কবরে গিয়ে তাকে ডাকি।
মেরাজুল বলেন, ‘হত্যাকারীরা আমার ছেলেদের ভবিষ্যৎ ও সংসার নষ্ট করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, যাতে কেউ আর এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।’