২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

চুরির গাড়ি নিলামে, চলছে হবিগঞ্জে

হবিগঞ্জ জেলার মানচিত্র

আড়াই বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে চুরি হওয়া একটি প্রাইভেট কার সিলেটের হবিগঞ্জে রাস্তায় চলাচল করছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও থানা-পুলিশের গাফিলতির কারণে প্রকৃত মালিকের হাতছাড়া হয়ে যায় গাড়িটি। চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ তথ্য পায়। গাড়িটি জব্দের জন্য আদালত নির্দেশ দিলেও নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ বলছে, তাদের চোখের সামনে পড়ছে না। অন্যদিকে বর্তমানে ব্যবহারকারী গাড়ি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, মালিকবিহীন পরিত্যক্ত অবস্থায় নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে মালিকানা যাচাইয়ের জন্য বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু সেখান থেকে প্রকৃত মালিকের নাম-ঠিকানা না দিয়ে একটি মোটরসাইকেলের মালিকের ঠিকানা দেওয়া হয়। প্রাইভেট কারের বদলে মোটরসাইকেলের মালিকের ঠিকানা দিলেও থানা-পুলিশ তা এড়িয়ে যায়। পরে গাড়িটি নিলামে বিক্রির জন্য মালখানায় দেয় পুলিশ। সেখানেও গাড়িটির ইঞ্জিন, চেসিস ও নিবন্ধন নম্বরের সঙ্গে বিআরটিএ থেকে পাঠানো ঠিকানা যাচাই-বাছাই করেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে নিলামে গাড়িটি বিক্রি হয়ে যায়।

ঘটনার শুরু ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের একটি পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে একটি প্রাইভেট কার (টয়োটা ডিএক্স প্রভোক্স) চুরি হয়। এ ঘটনায় গাড়িটির চালক জানে আলম বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় চুরির মামলা করেন। এ গাড়ি ভাড়া চালিয়ে আয়রোজগার করতেন জানে আলম। গাড়ি চুরি হওয়ার পর তিনি এখন বেকার। সংসার কীভাবে চলে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক ছেলে বিদেশে থাকেন। তাঁর আয় দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।

এদিকে মামলার কোনো কিনারা করতে না পেরে সীতাকুণ্ড থানা-পুলিশ ১০ মাস পর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর আদালত পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর মামলাটি তদন্ত শুরু করেন সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মো. শরীফ চৌধুরী। তদন্তের একপর্যায়ে গত বছরের জুলাইয়ে সিআইডি জানতে পারে, সীতাকুণ্ডে চুরি হওয়া গাড়িটি হবিগঞ্জের শিশু মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছে আছে। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০২১ সালের ১৬ মার্চ হবিগঞ্জ আদালতে নিলামের মাধ্যমে গাড়িটি কিনেছেন।

তদন্তে বেরিয়ে আসে ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার গোপলার বাজার গজনাইপুর ইউনিয়নের রয়েল বেঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে গাড়ির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি পাঠান গোপলার বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম। চিঠিতে উদ্ধার হওয়া প্রাইভেট কারের ইঞ্জিন, চেসিস ও গাড়ির নম্বর চট্ট মেট্রো গ-১১-৮৬৫৩ দেওয়া হয়। কিন্তু বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো-১ সার্কেল মোটরযান পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন প্রাইভেট কারের পরিবর্তে চট্ট মেট্রো-ল সিরিয়ালের একটি মোটরসাইকেলের মালিক চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আবদুল করিমের ঠিকানা দেন। সেখানে প্রাইভেট কারটির মালিক আবদুল করিমকে দেখানো হয়।

বিষয়টি ভুল হয়েছে স্বীকার করে আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে। প্রাইভেট কারের পরিবর্তে মোটরসাইকেলের মালিকের নাম–ঠিকানা দেওয়া হলেও ওই সময় পুলিশ কিছুই জানায়নি। পরে সংশোধন করে নবীগঞ্জ থানায় চিঠি দিয়েছি।’

প্রাইভেট কারের পরিবর্তে মোটরসাইকেলের মালিকের ঠিকানা দিলেও নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ পরবর্তী সময়ে তা আর যাচাই-বাছাই করেনি। মালিক না পাওয়ায় প্রাইভেট কারটি নিলামের জন্য হবিগঞ্জ আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ নিলামের মাধ্যমে প্রাইভেট কারটি বিক্রি করা হয়।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ডালিম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ভুলভ্রান্তি হতে পারে। বিআরটিএ থেকে প্রাইভেট কারের পরিবর্তে মোটরসাইকেলের মালিকের নাম–ঠিকানা দেওয়ার বিষয়টি ওই সময় নজরে আসেনি।

সিআইডি প্রাইভেট কারটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিলাম নেওয়া শিশু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু তিনি গাড়ি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। যোগাযোগ করা হলে শিশু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িটি আমি নিলামে নিয়েছি। ফেরত কেন দেব।’

আদালত সূত্র জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মো. শরীফ চৌধুরী সীতাকুণ্ড থেকে চুরি হওয়া প্রাইভেট কারটি চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে আবেদন করেন। আদালত গত ১৩ ফেব্রুয়ারি যেকোনো উপায়ে গাড়িটি জব্দ করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেন।

মো. শরীফ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটির সন্ধান পেলেও উদ্ধার করা যাচ্ছে না। আদালত এটি জব্দের জন্য নবীগঞ্জ থানা-পুলিশকে নির্দেশ দিলেও সাড়া মিলছে না।