রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে মারা যাওয়া তরুণের লাশ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশ শর্ত দিয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
মারা যাওয়া তরুণ সুমন শেখের (২৫) স্ত্রী জান্নাত আক্তার আজ রোববার দুপুরের দিকে প্রথম আলোর কাছে এ অভিযোগ করেন।
গতকাল দুপুরে থানাহাজত থেকে সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। লাশ বুঝে পেতে পরিবার আজ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়েছিল। কিন্তু তারা পুলিশি শর্তের কারণে লাশ বুঝে পায়নি বলে জানায়।
জান্নাত আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা লাশ বুঝে পেতে মর্গে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাশ আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। হাতিরঝিল থানা-পুলিশের এক এসআই আমাদের বলেছেন, গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে নেওয়া হলে লাশ দেওয়া হবে। আর যদি বর্তমান বসবাসস্থান ঢাকার রামপুরায় নেওয়া হয়, তাহলে লাশ দেওয়া হবে না।’
জান্নাত আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী এভাবে মারা গেল। এখন তার লাশও বুঝে পাচ্ছি না।’
হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয় কথা বলতে পারব না। তবে বৈধ দাবিদারেরা গেলে লাশ তো বুঝে পাওয়ার কথা।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এ রকম তো হওয়ার কথা না। ব্যাপারটা আমি দেখছি।’
জান্নাত আক্তার জানান, তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। সে জন্য ইতিমধ্যে তাঁরা ঢাকার আদালতে গেছেন। তবে যে আইনজীবীর সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি এখন ফোন ধরছেন না।
পরে লাশ হস্তান্তরে শর্তের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার মরদেহ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের মর্গে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পরিবারের কেউ মরদেহ নিতে আসেননি।
পরিবারের ভাষ্য, সুমন রামপুরায় একটি কোম্পানির পানিবিশুদ্ধকরণ যন্ত্র বিপণন অফিসে কাজ করতেন। গত শুক্রবার রাতে পুলিশ তাঁকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দাবি, সুমন আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবারের অভিযোগ, সুমনকে ধরার পর পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় পুলিশ তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
সুমন শেখ পশ্চিম রামপুরার ঝিলকানন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের দাড়িকান্দি এলাকায়। সুমনের বাবার নাম পেয়ার আলী।
সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী গতকাল শনিবার হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।