গভীর রাতে বাসায় ঢুকে ‘৪৫ মিনিটের মধ্যে’ তিন আলমারি ও লকার খুলে ৩৫ ভরি সোনা লুট  

বাসার সামনের এই জানালার গ্রিল কেটে ঢোকে চোর। আলমারি ও লকার না ভেঙেই স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নেওয়া হয়ছবি: সংগৃহীত

গভীর রাতে গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে ৩৫ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ আট লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে চোর। গত কোরবানির ঈদের এক দিন পর রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে জসীম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বাসায় এই চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় চুরির মামলা হলেও চোর ধরতে পারেনি পুলিশ।

এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া তাঁর জন্য কাল হয়েছে। স্ত্রী ও মেয়ের পছন্দের সব গয়না চোর নিয়ে গেছে।

জসীম উদ্দিন ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবসা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রিল কেটে চোর বাসার ভেতরে ঢুকে তিনটি আলমারি ও লকার খুলে বাসায় থাকা সব সোনার গয়না ও টাকা নিয়ে গেছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এসব গয়না ও টাকা নেওয়ার জন্য কিন্তু কোনো আলমারি ভাঙা হয়নি। আলমারি ও লকার খুলে এগুলো নিয়ে গেছে।

চুরির এই মামলাটি তদন্ত করছেন শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিনের বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে, একজন চোর বাসার ভেতরে ঢুকে আলমারি ও লকার থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে গেছে।

যেভাবে চুরি

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জসীমের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে তিনতলা ভবনের নিচতলায় এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন জসীম উদ্দিন। তাঁর বাসার সামনে সড়ক। রয়েছে দোকানপাটও। ফলে মধ্যরাত পর্যন্ত বাসার সামনে লোকজনের আনাগোনা থাকে। তবে বাসার পেছনের অংশে লোকজনের চলাচল কম। তাই বাসার পেছনের অংশের জানালায় আলাদাভাবে লোহার গ্রিল লাগান জসীম। পাশাপাশি বাসায় প্রবেশের প্রধান দরজায় সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগিয়েছেন। ঈদের আগের দিন (১৬ জুন) সপরিবার নোয়াখালী যান জসীম উদ্দিন। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় এসে ঈদের দিন ওই বাসায় আসেন তাঁর দুই ভায়রা (স্ত্রীর দুই বোনের স্বামী)। পরদিন বিকেলে আসেন আরও দুই আত্মীয়। তাঁরা সবাই ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার পর বাসা থেকে চলে যান। এরপর গভীর রাতে গ্রিল কেটে ওই বাসায় ঢোকে চোর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সজীব দে জানিয়েছেন, তাঁরা এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছেন। সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী হালকা-পাতলা গড়নের এক ব্যক্তি ওই রাতে গ্রিল কেটে বাসায় ঢোকেন। ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে ওই বাসা থেকে সোনা ও নগদ টাকা নিয়ে বেরিয়ে যান।

আত্মীয়রা চলে যাওয়ার পর দিন (১৯ জুন) সকালে জসীমের এক শ্যালিকা ওই বাসায় আসেন। অনেক চেষ্টা করেও দরজা খুলতে পারেননি তিনি। খবর পেয়ে ঢাকায় আসেন জসীম উদ্দিন। দেখতে পান বাসার সামনের একটি গ্রিল কাটা। সেই গ্রিল দিয়ে ছোট্ট একটা ছেলের ঘরের ভেতরে ঢোকানো সম্ভব জানিয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, মনে হচ্ছে গ্রিলের ওই কাটা জায়গা দিয়ে প্রথমে ছোট কাউকে ভেতরে ঢোকানো হয়েছে। পরে হয়তো সে ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলে চোর ভেতরে ঢুকেছে।

ঘরে ঢুকে জসীম দেখতে পান, বাসার তিনটি আলমারি খোলা। স্ত্রীর আট ভরি ওজনের আটটি সোনার চুড়ি ছাড়াও পাঁচ ভরি ওজনের আটটি সোনার হার, দেড় ভরি ওজনের চারটি লকেট, তিন ভরি ওজনের ২৮টি কানের দুলসহ ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার নেই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কষ্ট করে তিলে তিলে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য এসব সোনার গয়না কিনেছিলেন। গ্রিল কাটা চোর স্ত্রী-সন্তানদের সব সোনা চুরি করে নিয়ে গেছে।

জসীম উদ্দিন জানান, ১২ বছর বয়সী মেয়ের জন্য দুবাই থেকে তিন জোড়া চুড়ি এনেছিলেন। গলার হার এনেছিলেন নয়টি। মেয়ের জন্য কানের দুল এনেছিলেন পাঁচ জোড়া। মামলার এত দিনেও চোর ধরা না পড়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্ত্রী ও মেয়ে বারবার বলছে, চুরি হয়ে যাওয়া গলার হার, কানের দুলগুলো উদ্ধার হবে না? স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো জবাব দিতে পারছেন না।