ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের অতিথিকক্ষে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে আটকে রেখে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় মারধরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল বলে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, হাসপাতালে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। লাশটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফজলুল হক মুসলিম হলে পিটিয়ে একটি হত্যার ঘটনা শোনার পর ভোরেই আমি প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে মর্গে থাকা ব্যক্তি মৃত্যুর ঘটনা জানিয়েছে। ইতিমধ্যে আমার টিমের একজন শাহবাগ থানায় গিয়েছেন এ বিষয়ে মামলা করার জন্য।’
অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য বলেছি। সেগুলো দেখে কারা দোষী, তা শনাক্ত করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একটি সূত্র জানায়, মুঠোফোনচোর সন্দেহে গতকাল সন্ধ্যার পর ওই ব্যক্তিকে ফজলুল হক হলের অতিথিকক্ষে ধরে এনে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করা হয়। এর একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে হলের ক্যানটিনে রাতের খাবার খাইয়ে আবারও মারধর করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
চোর সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে ফজলুল হক হলে ভেতরে ধরে আনার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলেন এক শিক্ষার্থী।
এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে আবাসিক শিক্ষকেরা হলে যান বলে জানান হলের এক শিক্ষার্থী। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে আহত ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেখানে চিকিৎসক ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল থেকে চলে যান।
গতকাল মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপ ও নিজেদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কিছু শিক্ষার্থী আজ ভোরে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভও করেছেন।
তদন্ত কমিটি গঠন
পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। সাত সদস্যের কমিটিকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আজ সকালে ফজুলল হক হলের আবাসিক শিক্ষক আলমগীর কবিরকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করেন হল প্রাধ্যক্ষ শাহ্ মো. মাসুম। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক এম এম তৌহিদুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।
প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফজলুল হক মুসলিম হলে গতকাল রাতে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তদন্ত করার জন্য এই কমিটি গঠন করা হলো।
হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল রাতে ফজলুল হক মুসলিম হলে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শীদের আজ দুপুর ১২টার সময় হল কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এদিকে আজ সকাল থেকে ফজলুল হক হলের বেশ কিছু শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেছেন। সকালে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ শাহবাগ থানায় এজাহার নিতে ও মামলা করার আবেদন জানিয়েছেন।