সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার স্ত্রী মাহমুদা খানমকে খুনের জন্য আগেও বেশ কয়েকবার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য তিনি তাঁর সোর্স (তথ্যদাতা) কামরুল শিকদার ওরফে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী তাঁকে আংশিক জেরা করেন। আদালত জেরা মুলতবি রেখে ৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেন। গত ৯ এপ্রিল এই মামলায় মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবুলের শ্বশুরের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। তাঁকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা শুরু করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্যদানকালে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, তাঁর মেয়ে মাহমুদা বাবুলের সঙ্গে এক নারীর সম্পর্ক রয়েছে বিষয়টি জানার পর থেকে বাবুলের অত্যাচার আরও বৃদ্ধি পায়। এ জন্য বাবুল তাঁর মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করেন। খুন করতে বাবুল তাঁর সোর্স কামরুল শিকদার মুসাকে কাজে লাগান। মুসা প্রায়ই বাবুলের বাসায় আসা–যাওয়া করতেন। অস্ত্র কেনার জন্য বাবুল তাঁকে ৭০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। ঘটনার আগে বাবুল চীনে যান। তখনো মুসাকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মাহমুদাকে খুন করতে।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বাবুলের আইনজীবীরা মোশাররফকে জেরা করেন। বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাবুলকে এই মামলায় ফাঁসানোর জন্য সাক্ষ্যে অনেক কাহিনি সাজিয়েছেন তাঁর শ্বশুর। জেরায় এসব কাহিনি খণ্ডন করা হচ্ছে।
এদিকে শ্বশুরের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার পর আদালতে আসামির কাঠগড়ায় থাকা বাবুল আদালতের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন, তাঁর মামলার ধার্য দিনে সাদা পোশাকধারী পিবিআই কর্মকর্তারা এখানে ঘোরাফেরা করেন। তাঁরা মামলার তথ্য নিতে এখানে আসেন। ওই সময় আদালত বলেন, মামলার সাক্ষী ছাড়া যে কেউ আদালতে আসতে পারেন। উন্মুক্ত এজলাসেও আসেন অনেকে নানা দাপ্তরিক কাজে।
আজ দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাবুলকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই সময় তাঁর দুই সন্তানও আসে। তারা বাবুলের সঙ্গে কথাও বলে।
গত ১৩ মার্চ বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। বাবুলের সঙ্গে অভিযোগপত্রভুক্ত অপর ছয় আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। এই আসামিদের মধ্যে বাবুল, ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার কারাগারে আছেন। এহতেশামুল জামিনে, কামরুল ও খাইরুল শুরু থেকে পলাতক। আজ আদালতে কামরুল, খাইরুল ছাড়া অপর পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন বাবুল বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ওই দিনই বাবুলের শ্বশুর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মকর্তার সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মাহমুদাকে খুন করা হয়। এ জন্য তিনি সোর্সের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।