প্রয়াত সংসদ সদস্য সামসুদ্দোহার স্ত্রী হত্যার ঘটনায় মেয়েসহ গ্রেপ্তার ৩

গ্রেপ্তারপ্রতীকী ছবি

১৩ বছর আগে সাভারের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিনা খান মজলিশ হত্যার ঘটনায় সম্প্রতি তাঁর মেয়েসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি হলেন সেলিনা খানের মেয়ে শামীমা খান মজলিশ পপি (৫৭), তাঁদের বাসায় সেই সময় বৈদ্যুতিক কাজ করতেন সেই মিস্ত্রি সুবল কুমার রায় (৫০) এবং সেই সময়কার সংসদ সদস্যের বাসার গৃহকর্মী আরতি সরকার (৬০)।

পিবিআইয়ের ভাষ্য, শামীমা খানের সঙ্গে সুবল কুমারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁদের হাতেই ‘খুন হয়েছিলেন’ সেলিমা খান।

সুবলকে গত ৩০ মে সাভার থেকে আর ৪ জুন শামীমাকে সাভারের ভাগলপুর এবং আরতিকে পাকিজা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সেলিমা খানের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ভাই সফিউর রহমান একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির ওপর। আইডি তদন্ত করে এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বিবেচনা করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। আদালত তা গ্রহণ করে মামলা নিষ্পত্তিও করেন। কিন্তু মামলার বাদী সাফিউর রহমান খান তখন তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়ার আবেদন জানিয়েও ব্যর্থ হন। পরে পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিতে আদালতে পৃথক আবেদন করে। ২০২০ সালে আদালত পিবিআইকে এ মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন।

গত চার বছর তদন্ত করে পিবিআই এই খুনের ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সংসদ সদস্যের বাসায় মাঝেমধ্যেই কাজের সূত্রে মহল্লার বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি সুবল যেতেন। ওই আসা-যাওয়া করতে করতেই বিধবা শামীমার সঙ্গে সুবলের সম্পর্ক তৈরি হয়।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই বাসায় সুবলের যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায় জানিয়ে পিবিআইপ্রধান বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে সুবলকে বাসার কাছ দেখতে পেয়ে সেলিমা খান রাগারাগিও করেছিলেন। পরে পপির সহায়তায় সুবল ঘটনার দিন বাসায় ঢুকে ফল কাটার চাকু দিয়ে সেলিমার ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাসার রান্নাঘরের সুইচ বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে তার বের করে ওনাকে ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয়।

সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর দায়িত্ব পেয়ে নথিপত্র খুঁজতে গিয়ে সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান পিবিআইপ্রধান। তিনি বলেন, কিছু তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে এবং প্রয়াত সংসদ সদস্যের সন্তানদের দেওয়া তথ্য নথিভুক্ত করা হয়। ঘটনার সময় বাসার ভেতর কে কী দেখেছে, সে বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একজন পিবিআইকে জানায় যে ঘটনার সময় রান্নাঘরের সুইচ বোর্ড ভাঙা ছিল। ওই ভাঙা সুইচ বোর্ডের সূত্র ধরে সুবলকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দায় স্বীকার করেন।

২০১১ সালের ১৪ জুন ভোরবেলা সেলিমা খানকে সাভারে নিজের বাসায় গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার চার দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিমা খান মারা যান।