মানবতাবিরোধী অপরাধ
গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার বাসা পরিবর্তন করতেন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মজিদ, অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবদুল মজিদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার মাদারীপুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলেছে, ১৯৭১ সালে আবদুল মজিদের নেতৃত্বে নেত্রকোনার পূর্বধলার রামপুর মৌদাম গ্রামের বাসিন্দা আবদুল খালেকসহ তাঁর ছয় স্বজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মজিদ ১৯৭০ সালে পূর্বধলা থানা জামায়াতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হিসেবে গঠিত আলবদর বাহিনীর পূর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩–এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালে আবদুল মজিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এর পর থেকে আবদুল মজিদ পালিয়ে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে পূর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক নিজের দুই ভাই এবং পাঁচ চাচাতো ভাই মিলে একই বাড়িতে থাকতেন। তাঁরা আটজনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট দুপুরে আবদুল মজিদ তাঁর দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামে আবদুল খালেকের বাড়িতে ঢুকে একে একে সাতজনকে গুলি করে হত্যা করেন। হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেকের লাশ পাশের কংস নদে ফেলে দেন। অন্যদের লাশও কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দী করে ফেলে দেয় মজিদ বাহিনী। ওই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁরা আবদুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। তখন আবদুল খালেকের ভাই আবদুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান।
র্যাবের পরিচালক আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, একাত্তের মজিদ বাহিনীর হামলার পর বেঁচে যাওয়া আবদুল কাদের ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আবদুল মজিদসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে এই মামলার তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। এরপর ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মজিদসহ মোট সাত আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। বিচার চলাকালে এই মামলার দুজন আসামি (আহম্মদ আলী ও আবদুর রহমান) মারা যান। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যান আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আবদুস সালাম বেগ)। এখনো এই মামলার আরও দুই আসামি (আবদুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ) পলাতক রয়েছেন।
মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে ২০১৫ সালে আবদুল মজিদ তাঁর নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপন করেন। পরে তাঁর আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার চাকরি নেন। ২০১৫ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি কখনোই আদালতে হাজিরা দেননি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মজিদ গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তিনি অন্যের নিবন্ধন করা সিম কার্ড দিয়ে মুঠোফোন ব্যবহার করতেন। তিনি ও তাঁর ছেলেমেয়েরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তাঁরা নিয়মিত তাঁকে টাকা দিতেন। আত্মগোপনে থাকাকালে তিনি সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায়, এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।