‘আব্বা বাহিনী’র হামলা-লুটপাটের শিকার পরিবারটি বাড়িতে ফিরল ১০ মাস পর
ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পাঁচ বছর বয়সী গোলাম মোর্শেদ তার একটি স্কুলব্যাগ খুঁজে বের করেছে। ব্যাগ খুলে একে একে সে বের করে তার বই, খাতা ও কলম। সেগুলো বারবার ছুঁয়ে দেখছিল সে। আজ সোমবার দুপুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চর মীরেরবাগের একটি বাড়িতে। কথিত ‘আব্বা বাহিনী’র অত্যাচার–নির্যাতনের মুখে প্রায় ১০ মাস আগে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে এই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল শিশু মোর্শেদকে।
গোলাম মোর্শেদ তার মা, বাবা ও ছোট্ট চার ভাইবোনের সঙ্গে আজ নিজেদের বাড়িতে ফিরেছে। পুলিশ তাদের ওই বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে। গত বছরের এপ্রিলে বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতন করে মোর্শেদের পুরো পরিবারকে এলাকাছাড়া করেছিলেন ‘আব্বা বাহিনী’র সদস্যরা। সে সময় ছোট্ট মোর্শেদ তাঁর স্কুলব্যাগটিও নিয়ে যেতে পারেনি।
গত ২৫ জানুয়ারি “বুড়িগঙ্গার ওপারে ‘আব্বা বাহিনী’” শিরোনামে প্রথম আলো পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে পরিবারটিকে কথিত আব্বা বাহিনী কীভাবে এলাকাছাড়া করেছিল, সেসব তথ্য প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি ঢাকা জেলা পুলিশের নজরে আসে। এরপর পুলিশ পরিবারটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়।
মোর্শেদের বাবা আবিদ হোসেন ব্যবসায়ী এবং মা মরিয়ম গৃহিণী। এক যুগের বেশি সময় আগে শুভাঢ্যার চর মীরেরবাগ এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন তাঁরা। পাঁচ শিশুসন্তান নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকতেন। মরিয়মের ভাষ্য, মাদকের ব্যবসায় বাধা দেওয়া এবং শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের লোকদের বিরোধিতা করায় গত এপ্রিলে তাঁদের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট চালান আব্বা বাহিনীর সদস্যরা। তখন তিন দিন তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সেই থেকে তাঁরা এলাকাছাড়া ছিলেন। বন্ধ ছিল সন্তানদের লেখাপড়াও।
মরিয়মের অভিযোগ, তিন দিন বাসায় অবরুদ্ধ করার পর লুটপাট চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। তখন পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাননি মরিয়মরা। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। তবে কোনো আইনি সহায়তা পুলিশ দেয়নি। এমনকি পুলিশও তাঁদের এলাকা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়।
আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে মরিয়ম তাঁর স্বামী ও পাঁচ শিশুসন্তান নিয়ে চর মীরেরবাগ এলাকার দোতলা বাড়িতে প্রবেশ করেন। বাড়ির ভেতরের অংশে ধ্বংসস্তূপ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
পরিবারটিকে নিজেদের বাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারটি যেন নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারে, সে জন্য পুলিশ সব ধরনের সহায়তা করবে। তাদের কোনো সমস্যা হলে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
আব্বা বাহিনী আলোচনায় আসে ১০ জানুয়ারির পর। চাঁদার টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ওই দিন সাইফুল ইসলাম ওরফে রাসেল নামে নিজেদের দলের এক সদস্যকে টর্চার সেলে ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে হত্যা করেন বাহিনীর সদস্যরা। তাঁকে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। সমালোচনার মুখে পুলিশ এই বাহিনীর মাঠের নেতা আফতাব উদ্দিনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।