ফেসবুকে নামী রেস্তোরাঁয় সাহ্‌রি ও ইফতারে মূল্যছাড়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা

ঢাকার নামকরা একটি রেস্তোরাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে নড়াইল থেকে এই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)
ছবি: গোয়েন্দা পুলিশের সৌজন্যে

সাহ্‌রি ও ইফতারের খাবারে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়! রাজধানীর একটি খ্যাতনামা রেস্তোরাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে দেওয়া হচ্ছিল এমন বিজ্ঞাপন। চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে অনেক ক্রেতাই খাবারের ফরমাশ দিয়ে আগাম দাম পরিশোধ করেছেন। পরে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়ে জানতে পারেন, প্রতারিত হয়েছেন তাঁরা। এই প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

ডিবি জানিয়েছে, রাজধানীর যে রেস্তোরাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা করা হচ্ছিল, সেটির নাম ‘দ্য ক্যাফে রিও’।

চক্রের সদস্যরা শুধু খাবারের দোকানের নয়, তাঁরা ফেসবুকে লোভনীয় ছাড়ে মোবাইল ফোন, ঘড়ি, বাইসাইকেল, ক্যামেরা ও বাচ্চাদের খেলনা বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েও প্রতারণা করে আসছিল। পরে এ ঘটনায় ক্যাফে রিওর ব্যবস্থাপক রাসেল সরকার বাদী হয়ে ঢাকার পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন। তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, গত ৩ মার্চ কয়েকজন ক্রেতা প্রতারকদের ভুয়া ফেসবুক পোস্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খাবারের দাম পরিশোধ করে তাঁদের রেস্তোরাঁর মিরপুর শাখায় খেতে এলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ রকম আরও একাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ক্যাফে রিওর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে এই কাজ করছিল।

ওই মামলার পর ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। উপকমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদের নেতৃত্বে ডিবির সদস্যরা প্রতারক চক্রের সদস্য আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেন। সম্প্রতি নড়াইল জেলার কালিয়া থানার চাচুড়ি বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল আমিন স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর আর পড়ালেখা করেননি। পরে জড়িয়ে পড়েন প্রতারণায়। তাঁর কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি সিম কার্ড ও একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা হয়।

ঢাকার নামকরা একটি রেস্তোরাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে
ছবি: গোয়েন্দা পুলিশের সৌজন্যে

ডিবি বলছে, ঢাকায় ক্যাফে রিওর চারটি শাখা রয়েছে। এক বছর ধরে এসব শাখার নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে লোকজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন চক্রের সদস্যরা। অল্প টাকা হওয়ায় ক্রেতারাও এ বিষয়ে অভিযোগ না করায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তাঁরা।

ক্যাফে রিওর ব্যবস্থাপক রাসেল সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সাহ্‌রি ও ইফতার নয়, এক বছর ধরে তাঁরা খাবার নিয়ে এই প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকার খাবারের অর্ডার নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের সঙ্গে গ্রাহকদের ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। পাশাপাশি রেস্টুরেন্টের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির কর্মকর্তারা জানান, চক্রের সদস্যরা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তাঁদের ফেসবুক পেজের আদলে পেজ খুলে সেখানে এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করতেন। কেউ খাবার কিংবা জিনিসপত্র অর্ডার করতে এলে প্রতিষ্ঠানের পেজ ব্রাউজ করলে গ্রাহকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতারকদের বানানো পেজে চলে যেতেন। সেখানে দেওয়া নম্বরগুলোতে টাকা পাঠিয়ে অর্ডার দিতেন।

ডিবি কর্মকর্তারা আরও বলেন, চক্রের সদস্যরা শুধু ফেসবুকে বিজ্ঞাপনই দিতেন না, এগুলো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ‘বুস্টিং’ করতেন। এভাবে গত এক বছরে কয়েক শ গ্রাহকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা।