২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

থানায় পানি চাইলে মুখে থুতু দেওয়া হয়

  • ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

  • নিহতের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ।

  • পুলিশের দুই সোর্সের সাত বছর কারাদণ্ড।

ইশতিয়াক হোসেন

ছয় বছর আগে রাজধানীর পল্লবীতে একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠান থেকে ইশতিয়াক হোসেন (জনি) ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পল্লবী থানায় ইমতিয়াজকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে পুলিশ। তখন বড় ভাই ইশতিয়াক তাতে বাধা দিলে তাঁকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ইশতিয়াকের বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরেন এসআই জাহিদুর রহমান। ইশতিয়াক একটু পানির জন্য আকুতি জানান। পানি না দিয়ে তাঁর মুখে থুতু ছিটিয়ে দেন এসআই জাহিদ।

থানা হেফাজতে নির্যাতনে ইশতিয়াক মৃত্যুর ঘটনায় মামলার রায় ঘোষণার সময় পানি চাইলে মুখে থুথু দেওয়ার কথা তুলে ধরেন বিচারক। তিনি থানা হেফাজতে পুলিশের এমন আচরণকে ‘চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেন। গতকাল বুধবার মামলাটির রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ।

মামলার রায়ে পল্লবী থানার তৎ​কালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ইসলাম ও এএসআই কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর দুই আসামি পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) সুমন ও রাসেলের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার ​আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সাত বছর আগে পাস হওয়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে প্রথম কোনো মামলার রায় হলো।

এটি সাত বছর আগে পাস হওয়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে করা কোনো মামলার প্রথম রায়। ২০১৩ সালে আইনটি পাস হয়। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহত ইশতিয়াকের ছোট ভাই ও মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। যার কারণে তিনি মারা যান। ইশতিয়াক জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে করা এই মামলার বিচার পেতে তাঁদের অনেক বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়েছে। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করছেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

দণ্ডিত আসামিদের দুজন এখনো পলাতক। তাঁরা হলেন এএসআই কামরুজ্জামান ও সোর্স রাসেল। আগে থেকেই কারাগারে আছেন এসআই জাহিদ ও সোর্স সুমন। জামিনে ছিলেন এএসআই রাশেদুল ইসলাম। রায়ের পর তাঁকেও কারাগারে পাঠানো হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আসামিদের আইনজীবী ফারুক আহমেদ ও শাহিনুর ইসলাম।

ঘটনা সম্পর্কে মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এরপর সুমনের ফোন পেয়ে পুলিশ এসে ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায় এবং থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করে। ইশতিয়াকের অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন ইমতিয়াজ। মামলায় পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান, এসআই জাহিদুর রহমান, আবদুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা ও কনস্টেবল নজরুল এবং সোর্স সুমন ও রাসেলকে আসামি করা হয়।

আদালত মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্তকালে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করেন। চার বছরে বেশি সময় বিচারকাজ চলার পর গতকাল রায় দেন আদালত। আইনের চোখে সবাই যে সমান, এই রায়ের মধ্য দিয়ে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু।