‘আমার মৃত ছেলের নামে কেন সাপের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মানুষ’

সাবিদ মাহমুদছবি: সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর আগে কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাপের কামড়ে মারা যায় শিশু সাবিদ মাহমুদ। এখন তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। শিশুটিকে সম্প্রতি চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপে কেটেছে উল্লেখ করে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে।

বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে শিশু সাবিদের বাবা সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলছেন, ‘আমার মৃত ছেলের নামে কেন সাপের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মানুষ।’

চার বছরের শিশু সাবিদ মাহমুদকে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পেকুয়ায় গ্রামের বাড়িতে সাপ কামড় দেয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে তাকে কী সাপ কামড় দিয়েছিল, তা শনাক্ত করা যায়নি।

সেই সাবিদ মাহমুদের মৃত্যুর ঘটনাকে সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করে ফেসবুকে শেয়ার করছেন কেউ কেউ।

‘জয়নুল আবেদিন আশরাফী’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শনিবার সাবিদের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘যশোরে বাড়ির উঠানে খেলার সময় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে এক ছোট শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সবাই শেয়ার করেন।’

পোস্টটিতে শিশুর ছবির সঙ্গে একটা সাপের ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই পোস্টটি আজ রোববার পর্যন্ত ১০৬ জন শেয়ার করেছেন। নিচে ছয়টি কমেন্ট পড়েছে। তার মধ্যে একজন অবশ্য ছেলেটি আগে মারা গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তারপরও পোস্টটি সরানো হয়নি।

‘রাসেলস ভাইপার। সবাই সতর্ক হোন। বাড়ির উঠানে খেলার সময় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যু এক ছোট শিশুর। স্থান নোয়াপাড়া।’ এভাবে পোস্ট দেওয়া হয়েছে ‘সাজু আহমেদ’ নামের এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে।

‘সন্ধ্যা নদীর তীরে উজিড়পুর বরিশাল’ নামের একটি পেজে শিশু সাবিদের ছবি দিয়ে একটা ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।

‘মা ইলেকট্রিক চৌগাছা’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সাবিদের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, রাসেলস ভাইপারের কামড়ে সুন্দর শিশুটির মৃত্যু হলো।

২০২২ সালে সাপের কামড়ে শিশু সাবিদের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা সহযোগী মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সেই বাড়িতে গিয়েছিল। তখন তারা সাপে কাটা–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছিল।

মিজানুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি (সাবিদ) মারা গেছে দুই বছর আগে। কী সাপে কেটেছিল, তা–ও জানা যায়নি তখন। কিন্তু রাসেলস ভাইপারের কামড়ে সম্প্রতি শিশুটি মারা গেছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপার চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো পাওয়া যায়নি। এ ধরনের আতঙ্ক ছড়ানোর কারণে যে যেখানেই সাপ দেখছে, সেখানেই মেরে ফেলছে।

শিশুটিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি চোখে পড়েছে সাবিদের বাবা সালাহউদ্দিন মাহমুদের। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ কেন আমার মৃত ছেলেকে নিয়ে পোস্ট দিয়ে সাপের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, জানি না। আমি এ জন্য কী করতে পারি? বিষয়টা দুঃখজনক।’

চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সত্য–মিথ্যা যাচাই না করে পুরোনো ছবি ও ভিডিও দিয়ে মানুষ ফেসবুকে রাসেলস ভাইপার নামে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। আর সাপ দেখলেই মেরে ফেলা হচ্ছে। সাপ ধরা ও মারা দণ্ডনীয় অপরাধ।