বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য
আইনি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসিতে দুদকের চিঠি
বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে যাঁরা মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তা দুদককে জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুদকের পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান চিঠি দুটি পাঠিয়েছেন।
দুদকের পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৪ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। চিঠিতে তাঁদের নাগরিকত্বের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। নাগরিকত্বের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সে জন্য তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লেখা দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৪ মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গৃহীত ফলাফল দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২৪ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড (যদি থাকে) থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ফলাফল দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানোর অনুরোধ করা হলো।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের ‘রেসিডেন্স কার্ড’ রয়েছে। সাবেক পাঁচজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে। তাঁরা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলী। তাঁদের মধ্যে মাহবুব আলী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিনকার্ড আছে, এমন সাবেক চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ মোট সাতজন সংসদ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আবদুস শহীদ, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহ্মেদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ), মাহফুজুর রহমান ও সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। তাঁদের মধ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
‘জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ’ ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এরই মধ্যে জুনাইদ আহ্মেদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুদক।
এ ছাড়া কানাডার নাগরিকত্ব আছে, এমন ছয়জনের নাম এসেছে। তাঁরা হলেন আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও হাবিব হাসান।
সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাপানে থাকার অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড) পেয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান (টাঙ্গাইল-২) জার্মানির নাগরিক এবং এম এ ওয়াহেদ (ময়মনসিংহ-১১) পাপুয়া নিউগিনির নাগরিক।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসা ২৪ জনের মধ্যে ৫ জন বর্তমানে কারাগারে। অন্যরা ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকে গোপনে দেশত্যাগ করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালী প্রায় ২০০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তাঁর পরিবার, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ বেশ কিছু সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।