২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা নিয়ে বছর শুরু

২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫১২ জন। গত ১৩ অক্টোবরের পর এটি এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত।

বিদায়ী বছরের মার্চ মাসের শুরু পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল স্বস্তির। মার্চ থেকে শুরু হয় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করে। এরপর থেকে সংক্রমণ কমতে থাকে। এই নিম্নমুখী প্রবণতা চলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।

কিছুদিন ধরে দেশে করোনা রোগী আবার বাড়ছে। করোনার অতি সংক্রামক ধরন অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পুরো বিশ্বেই (বিশেষ করে ইউরোপে) উদ্বেগজনকভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। করোনার নতুন এই ধরন দেশে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়াতে শুরু করেছে কি না, তা বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ফলে নতুন বছর শুরু হচ্ছে সংক্রমণ আবারও বাড়ার শঙ্কা নিয়ে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫১২ জন। গত ১৩ অক্টোবরের পর এটি এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা প্রায় ১২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের খবর জানায় সরকার। এরপর থেকে কয়েক দফায় সংক্রমণ চিত্রে ওঠা–নামা দেখা গেছে। তবে করোনার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ আকার ধারণ করে গত জুন-জুলাই মাসে। গত ২৬ জুন থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন করোনায় সংক্রমিত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে নারীর মৃত্যুহার কম ছিল। গত মার্চে দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়ার পর থেকে নারীর মৃত্যু বাড়ছে। বর্তমানে নারীর মৃত্যুহার ৩৬ শতাংশের বেশি। গত ১ মার্চ এই মৃত্যুহার ছিল ২৫ শতাংশের কম।

আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ২১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে নামে। এখনো তা ৫ শতাংশের নিচে আছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্ত ১ শতাংশের ঘরে ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারণ করা মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে রোগী শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সে হিসাবে দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

পাঁচ দিন ধরে শনাক্তের হার ২ শতাংশের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর—এই এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৩ শতাংশ রোগী বেড়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরন অমিক্রন বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্যের অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এখন পর্যন্ত দেশে অমিক্রনে মোট ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

অমিক্রন ও ডেলটার দাপটে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপে এক দিনে নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে অমিক্রন ও ডেলটার দাপটকে ‘সুনামি’ আখ্যা দিয়েছে। পাশের দেশ ভারতেও করোনা সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করেছে।

আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
অমিক্রন ও ডেলটা মিলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এখনই সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

দেশে সপ্তাহের ব্যবধানেই নতুন শনাক্ত রোগী প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই ঢাকা জেলার। স্বাস্থ্যবিধি না মানা, রাজনৈতিক জনসমাগম, বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক উৎসব, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে বাংলাদেশ অমিক্রনের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকায়। ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানা হচ্ছে না। করোনার টিকাও খুব বেশি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই দুটির ঘাটতি ভয়ের কারণ। পাশাপাশি করোনার ডেলটা ধরন এখনো সক্রিয়। অমিক্রন ও ডেলটা মিলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এখনই সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৮ হাজার ৬৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় একজন পুরুষ ও একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা ঢাকা ও খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৯ জন। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৭২ জনের। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০১ জন।