মৃতের সংখ্যা এক লাখে রাখতে পারাই সাফল্য: ট্রাম্প

নিউইয়র্কের ব্যস্ততম এলাকা জ্যাকসন হাইটস এখন জনশূন্য। ছবিটি ২৯ মার্চ তোলা। ছবি: তোফাজ্জল লিটন
নিউইয়র্কের ব্যস্ততম এলাকা জ্যাকসন হাইটস এখন জনশূন্য। ছবিটি ২৯ মার্চ তোলা। ছবি: তোফাজ্জল লিটন

নিজ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশঙ্কা করেছেন, আমেরিকায় করোনাভাইরাসে এক লাখ থেকে দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। তবে মৃতের সংখ্যা এক লাখের মধ্যে রাখতে পারাকে সাফল্য মনে করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

আমেরিকায় আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব পালনের নির্দেশ বর্ধিত করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘জীবনে চাঞ্চল্য ফিরে পেতে চাই।’ কবে এ চাঞ্চল্য ফিরবে, প্রেসিডেন্ট নিজেও জানেন না। মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। পরের দুই সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আগামী ১ জুনের মধ্যে দেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেক্সাস ডিজিজের প্রধান অ্যান্থনি ফাউসির বরাত দিয়ে আগামী দুই সপ্তাহে আমেরিকায় গণমৃত্যুর আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

এর মধ্যে প্রায় সব রাজ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও বেশি আক্রান্ত নিউইয়র্কে। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। ২৮ মার্চ নিউইয়র্কে আট প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিউজার্সির প্যাটারসন ও মিশিগান থেকে অপর দুই প্রবাসী নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিউইয়র্ক নগরীতে ২৯ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত ৭৭৭ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। ৩০ মার্চের মধ্যেই এ সংখ্যা হাজার পেরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ১ এপ্রিলের মধ্যে ৪০০ ভেন্টিলেটর পাঠানোর জন্য ফেডারেল সরকারের প্রতি জোর আবেদন জানিয়ে বলেছেন, না হলে বহু জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ম্যানহাটনের পশ্চিম দিকের জলাধারে এক হাজার শয্যার নেভি হাসপাতালে ৩১ মার্চ থেকেই করোনায় আক্রান্ত নয়, এমন রোগীদের স্থানান্তর করা শুরু হবে।

নিউইয়র্কের প্রবাসীবহুল কুইন্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এক দিন আগেই নগরীর কুইন্সে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৩৭, ব্রুকলিনে ৮ হাজার ৮৮৭ জন, ব্রঙ্কসে ৬ হাজার ২৫০, ম্যানহাটনে ৫ হাজার ৫৮২ এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৯৮৪ ছাড়িয়ে গেছে।

প্রবাসী কমিউনিটির অনেকেই হাসপাতালে আছেন। এর মধ্যে বাংলা সংবাদমাধ্যমের ইলিয়াস খসরু, ফরিদ আলম, স্বপন হাই ছাড়াও চিকিৎসক ওসমানী, সাবেক ছাত্রনেতা শাহাব উদ্দিন, কমিউনিটি নেতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকের জন্য স্বজনেরা দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

নিউইয়র্কের ব্যস্ততম এলাকা জ্যাকসন হাইটস এখন জনশূন্য। ছবিটি ২৯ মার্চ তোলা। ছবি: তোফাজ্জল লিটন
নিউইয়র্কের ব্যস্ততম এলাকা জ্যাকসন হাইটস এখন জনশূন্য। ছবিটি ২৯ মার্চ তোলা। ছবি: তোফাজ্জল লিটন

নিউইয়র্কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সেন্ট্রাল পার্কে হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের কাছে আইসিইউ ইউনিটসহ ৬৮ শয্যার এ হাসপাতালে ৩১ মার্চ থেকে পুরোদমে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মেয়র বিল ডি ব্লাজিও জানিয়েছেন।

নিউইয়র্ক নগরীর জরুরি বিভাগের অ্যাম্বুলেন্সকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজারের বেশি জরুরি রোগীর ডাকে সাড়া দিতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের এ মহামারির সময় রাজ্য গভর্নর ও মেয়র সার্বক্ষণিক নাগরিকদের পাশে আছেন। সংকটে রাজ্যের নাগরিকের পাশে থেকেই শুধু নয়, ফেডারেল সরকার আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো নাগরিকদের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন। ২৯ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা হলেও আশার কথা শুনিয়েছেন রাজ্য গভর্নর। তিনি বলেছেন, ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত যে হারে করোনাভাইরাসের রোগীর আগমন ঘটেছিল হাসপাতালে, তা এখন কিছুটা কমেছে। আগে চার দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছিল। এখন ছয় দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে।

নিউইয়র্কের হাসপাতালে কর্মরত লোকজনের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, অপরীক্ষিত ওষুধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লরোকুইন করোনাভাইরাসের রোগীকে দেওয়ার কারণে অনেক মৃত্যু ঘটছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ম্যালেরিয়া রোগে ব্যবহার করা এ ওষুধ নিউইয়র্কের হাসপাতালে রোগীদের ওপর ব্যবহার করা হচ্ছে।

হচ্ছে।