রোগী নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটি
ডিএনসিসি হাসপাতালে বেলা একটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত রোগী আসেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হন
চার দিন আগে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুমিল্লার হোমনা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জহুরা বেগম। অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়া শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারীর। গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে জহুরাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন স্বজনেরা।
ভোর চারটার দিকে ঢাকা পৌঁছে জহুরাকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা খালি না থাকায় কোনো হাসপাতালেই তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি।
সবখানেই চিকিৎসক ও নার্সদের অনেক করে অনুরোধ করেছি। কিন্তু অক্সিজেন নেই, শয্যা খালি নেই—এসব বলে ফিরিয়ে দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাতটায় স্বজনেরা জহুরাকে নেন মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে। সেখানেও আইসিউই খালি না থাকায় তাঁকে অন্য হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসকেরা। সকাল নয়টার দিকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালেও নেওয়া হয় জহুরাকে। সেখানে আইসিইউ শয্যা পেয়েও খরচ বেশি হওয়ায় স্বজনেরা তাঁকে আবার ডিএনসিসি হাসপাতালে নেন। দ্বিতীয়বার আসার প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে শয্যা খালি হলে ভর্তির সুযোগ হয় জহুরার।
মাকে নিয়ে কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ক্লান্ত মো. আলাউদ্দিনের প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবখানেই চিকিৎসক ও নার্সদের অনেক করে অনুরোধ করেছি। কিন্তু অক্সিজেন নেই, শয্যা খালি নেই—এসব বলে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
গতকাল বেলা একটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর করোনা শনাক্ত বা করোনার উপসর্গের রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসছে। আড়াই ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে এমন রোগী আসেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হন। আইসিইউ না থাকায় ফেরত যেতে হয় দুজনকে।
আইসিইউ না থাকায় চাঁদপুর থেকে আসা মনুজা বেগমকে (৫০) ডিএনসিসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। মেয়ে নার্গিস বেগম বলেন, ‘চাঁদপুর থেকে এসে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় এখানে এসেছি। এখানেও ভর্তি নিচ্ছে না।’ মনুজাকে তাঁর স্বজনেরা অন্য কোথাও ভর্তি করাতে পেরেছেন কি না, তা জানতে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁদের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তবে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গতকাল রাজধানীর মহাখালী এলাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ডিএনসিসি হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর সাইরেন বাজিয়ে হাসপাতালে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে। এদের বেশির ভাগই আগে কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েছে। কিন্তু ফাঁকা শয্যা না থাকায় ভর্তি করানো যাচ্ছিল না।
রোগী ফেরত যাওয়ার বিষয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রোগী বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও স্বজনদের জানিয়ে সাধারণ শয্যায় ভর্তি নেওয়া হয়। বিষয়টি জানালে অনেকেই রোগী অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
রোগী বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও স্বজনদের জানিয়ে সাধারণ শয্যায় ভর্তি নেওয়া হয়। বিষয়টি জানালে অনেকেই রোগী অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
ভর্তি করাতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) সামনে গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত রোগী ভর্তির বেশ চাপ দেখা যায়। শ্বাসকষ্ট থাকলেও শয্যা খালি না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সেই অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রোগীদের ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
ঢামেকেই করোনার চিকিৎসা নিয়েছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। ঢামেকে তখন আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। স্বজনেরা তাঁকে অন্য হাসপাতালে নেন। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে আবার ঢামেকেই ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে আসার পর হাবিবুরকে ভর্তির জন্য শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁকে হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই ভর্তির চেষ্টা করা হচ্ছিল। পাশাপাশি অক্সিজেন দেওয়াও হচ্ছিল তাঁকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর দুপুর ১২টার দিকে ভর্তি করা হয় হাবিবুরকে।
তবে শয্যা খালি না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব রওশন আরা বেগমকে। ছেলে ফারুক সরকার বলেন, ‘মায়ের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাই চলে যাচ্ছি অন্য কোথাও ভর্তি করাতে।’ পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সক্ষমতার বেশি রোগী এলে ফেরত পাঠাতেই হয়।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট শয্যার চেয়ে ২৮ জন বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন।