করোনার টিকা
বৈশ্বিক তালিকায় দেশের তিন টিকা
বাংলাদেশে চীনা টিকার পরীক্ষা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরীক্ষার কোনো খরচ বাংলাদেশ বহন করবে না। তবে দেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকার তালিকায় গ্লোবের তিনটি টিকা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, চীনের বেসরকারি সিনোভেক কোম্পানির টিকার পরীক্ষায় বাংলাদেশ যৌথ অর্থায়ন করবে না। সিনোভেকের সঙ্গে টিকার পরীক্ষার চুক্তিতে যৌথ অর্থায়নের বিষয় ছিল না।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) চীনা টিকার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল। গত মাসে চীনের কোম্পানিটি করোনাকালে অর্থসংকটের কথা তুলে বাংলাদেশের কাছে যৌথ অর্থায়নের প্রস্তাব দেয়।
আইসিডিডিআরবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টিকার পরীক্ষা নিয়ে সিনোভেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে। পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে এটা বলার সময় এখনো আসেনি। তা ছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠান তাদের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য মৌখিকভাবে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
সিনোভেকের টিকার পরীক্ষা ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কে চলছে। বাংলাদেশের সাতটি হাসপাতালের ৪ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়ে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। আইসিডিডিআরবি এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে রেখেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার টিকা উদ্ভাবন ও অগ্রগতির তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করে। সংস্থার সর্বশেষ হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত ৪২টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। তার মধ্যে চীনের সিনোভেকের টিকাও আছে। টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। এই পর্যায়ে টিকা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে তা নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না বা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের টিকারও এই পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের নাম আছে। যে ১৫৬টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পূর্বাবস্থায় আছে, তার মধ্যে গ্লোবের তিনটি টিকা আছে। গ্লোব বায়োটেকের গবেষণা ও উন্নয়ন শাখার প্রধান আসিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাণীর ওপর আমাদের টিকার সফল পরীক্ষা হয়েছে। আমরা এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা তিনটি টিকা উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে: ডি৬১৪ ভেরিয়েন্ট এমআরএনএ, ডিএনএ প্লাজমিড ও এডিনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর। গ্লোব কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকার তালিকায় বিশ্বে একমাত্র গ্লোবের তিনটি টিকার নাম আছে, আর কোনো প্রতিষ্ঠানের তিনটি টিকা নেই।
এদিকে গত সপ্তাহে গ্লোবের সঙ্গে আইসিডিডিআরবির একসঙ্গে কাজ করার একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আইসিডিডিআরবির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই সমঝোতা স্মারকের আওতায় গ্লোবের টিকার পরীক্ষারও সুযোগ আছে।
গ্লোব বায়োটেকের কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, টিকা পরীক্ষার জন্য কন্ট্র্যাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) হিসেবে কাজ করবে আইসিডিডিআরবি। আইসিডিডিআরবি গবেষণা প্রটোকল তৈরি করে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (বিএমআরসি) জমা দেবে। বিএমআরসি নীতিগত অনুমোদন দিলে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে বাধা থাকবে না।’ তবে কবে নাগাদ, কত মানুষের ওপর এই পরীক্ষা হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত তিন কোটি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা মিলনায়তনে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব যুক্তরাজ্য থেকে টিকা আসার সম্ভাবনার কথা বলেন।
উদ্ভাবন প্রতিযোগিতায় যে টিকাগুলো এগিয়ে আছে অক্সফোর্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের শারীরিক সমস্যা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা স্থগিত করা হচ্ছে। তবে কোন টিকা আগে সফল ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, টিকা পাওয়ার জন্য সরকার বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
চীনা টিকার পরীক্ষা অনিশ্চিত। গ্লোবের টিকার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইসিডিডিআরবি।